পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ৩৩৫ পেটরা বহিয়া আনিয়াছিল তাহার কাছ হইতে সন্ধান লইয়া অভ্যাজ ইস্কুলে যাইবার গাড়িতে চন্দ্রভান বেণুকে হরলালের মেসে আনিয়া উপস্থিত করিয়াছে। কেন যে হরলালের পক্ষে বেণুদের বাড়ি যাওয়া একেবারেই অসম্ভব তাহা সে বলিতেও পারিল না, অথচ তাহদের বাড়িতেও যাইতে পারিল না । বেণু যে তাহার গলা জড়াইয়া ধরিয়া তাহাকে বলিয়াছিল ‘আমাদের বাড়ি চলো”— এই স্পর্শ ও এই কথাটার স্মৃতি কত দিনে কত রাত্রে তাহার কণ্ঠ চাপিয়া ধরিয়া যেন তাহার নিশ্বাস রোধ করিয়াছে— কিন্তু ক্রমে এমনও দিন আসিল যখন দুই পক্ষেই সমস্ত চুকিয়া গেল— বক্ষের শিরা আঁকড়াইয় ধরিয়া বেদন নিশাচর বাদুড়ের মতো আর ঝুলিয়া রহিল না। ما হরলাল অনেক চেষ্টা করিয়াও পড়াতে আর তেমন করিয়া মনোযোগ করিতে পারিল না । সে কোনোমতেই স্থির হইয়া পড়িতে বসিতে পারিত না । সে খানিকটা পড়িবার চেষ্টা করিয়াই ধ" করিয়া বই বন্ধ করিয়া ফেলিত এবং অকারণে দ্রুতপদে রাস্তায় ঘুরিয়া আসিত । কলেজে লেকৃচারের নোটের মাঝে মাঝে খুব বড়ো বড়ে ফাক পড়িত এবং মাঝে মাঝে যে-সমস্ত অঁাকজোক পীড়িত তাহার সঙ্গে প্রাচীন ঈজিপ্টের চিত্রলিপি ছাড়া আর কোনো বর্ণমালার সাদৃশ্ব ছিল না। হরলাল বুঝিল, এ-সমস্ত ভালো লক্ষণ নয়। পরীক্ষায় সে যদি-বা পাস হয় বৃত্তি পাইবার কোনো সম্ভাবনা নাই। বৃত্তি না পাইলে কলিকাতায় তাহার একদিনও চলিবে না। ও দিকে দেশে মাকেও দু-চার টাকা পাঠানে চাই। নানা চিন্তা করিয়া চাকরির চেষ্টায় বাহির হইল। চাকরি পাওয়া কঠিন, কিন্তু না পাওয়া তাহার পক্ষে আরো কঠিন ; এইজন্ত আশা ছাড়িয়াও আশা ছাড়িতে পারিল না। হরলালের সৌভাগ্যক্রমে একটি বড়ো ইংরেজ সদাগরের আপিসে উমেদারি করিতে গিয়া হঠাৎ সে বড়োসাহেবের নজরে পড়িল। সাহেবের বিশ্বাস ছিল, তিনি মুখ দেখিয়া লোক চিনিতে পারেন। হরলালকে ডাকিয় তাহার সঙ্গে দু-চার কথা কহিয়াই তিনি মনে মনে বলিলেন, এ লোকটা চলিবে । জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাজ জানা আছে ?” হরলাল কহিল, “না।” “জামিন দিতে পরিবে ?” তাহার উত্তরেও না”। “কোনো বড়োলোকের কাছ হইতে সার্টিফিকেট আনিতে পার ?” কোনো বড়োলোককেই সে জানে না । শুনিয়া সাহেব আরো যেন খুশি হইয়াই কহিলেন, “আচ্ছা বেশ, পচিশ টাকা