পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ took \లివసి করিতেছিল, এমন সময় সাত বছরের ছেলে বেণুগোপাল বাগানে খেলা সারিয়া দেউড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইল। দরোয়ান হরলালকে দ্বিধা করিতে দেখিয়া আবার কহিল, “বাৰু, চল যাও।” বেণুর হঠাৎ জিদ চড়িল – সে কহিল, "নেহি জায়গা ” বলিয়া সে হরলালের হাত ধরিয়া তাহাকে দোতলার বারান্দায় তাহার বাপের কাছে লইয়া হাজির করিল। বাবু তখন দিবানিদ্রা সারিয়া জড়ালসভাবে বারান্দায় বেতের কেদারায় চুপচাপ বসিয়া পা দোলাইতেছিলেন ও বৃদ্ধ রতিকান্ত একটা কাঠের চৌকিতে আসন হইয়া বসিয়া ধীরে ধীরে তামাক টানিতেছিল। সেদিন এই সময়ে এই অবস্থায় দৈবক্রমে হরলালের মাস্টারি বাহাল হইয়া গেল । রতিকান্ত জিজ্ঞাসা করিল, “আপনার পড়া কণী পর্যন্ত ।” হরলাল একটুখানি মুখ নিচু করিয়া কহিল, “এনট্রেন্স পাস করিয়াছি।” রতিকান্ত ভ্ৰ তুলিয়া কহিল, “শুধু এনট্রেন্স পাস ? আমি বলি কলেজে পড়িয়াছেন। আপনার বয়সও তো নেহাত কম দেখি না ।” হরলাল চুপ করিয়া রহিল। আশ্রিত ও আশ্রয়প্রত্যাশীদিগকে সকল রকমে পীড়ন করাই রতিকাস্তের প্রধান আনন্দ ছিল । রতিকান্ত আদর করিয়৷ বেণুকে কোলের কাছে টানিয়া লইবার চেষ্টা করিয়া কহিল, “কত এম. এ. বি. এ. আসিল ও গেল— কাহাকেও পছন্দ হইল না – আর শেষকালে কি সোনাবাবু এনট্রেন্স-পাস-করা মাস্টারের কাছে পড়িবেন।” বেণু রতিকান্তের আদরের আকর্ষণ জোর করিয়া ছাড়াইয়া লইয়া কহিল, “যাও!” রতিকান্তকে বেণু কোনোমতেই সহ করিতে পারিত না, কিন্তু রতিও বেণুর এই অসহিষ্ণুতাকে তাহার বাল্যমাধুর্যের একটা লক্ষণ বলিয়া ইহাতে খুব আমোদ পাইবার চেষ্টা করিত, এবং তাঁহাকে সোনাবাবু চাদবাবু বলিয়া খেপাইয়৷ আগুন করিয়া তুলিত। হরলালের উমেদারি সফল হওয়া শক্ত হইয়া উঠিয়াছিল ; সে মনে মনে ভাবিতেছিল, এইবার কোনো সুযোগে চৌকি হইতে উঠিয়া বাহির হইতে পারিলে বঁচে যায়। এমন সময়ে অধরলালের সহসা মনে হইল, এই ছোকরাটিকে নিতান্ত সামান্ত মাহিনী দিলেও পাওয়া যাইবে । শেষকালে স্থির হইল, হরলাল বাড়িতে থাকিবে, খাইবে ও পাচ টাকা করিয়া বেতন পাইবে। বাড়িতে রাখিয়া যেটুকু অতিরিক্ত দাক্ষিণ্য প্রকাশ করা হইবে, তাহার বদলে অতিরিক্ত কাজ আদায় করিয়া লইলেই এটুকু দয়া সার্থক হইতে পারিবে ।