পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২৩৫ আস্তে উঠিয়া বাহিরে চলিয়া গেল। তাহার নিজের একটা কী কথা বলিবার ছিল, সে আর বলা হইল না। ভূপতি যে একটা ক্ষোভ পাইয়া গেল, চারুর কাছে তাহা অগোচর রহিল না। মনে হইল, ‘ফিরিয়া ডাকি । কিন্তু ডাকিয়া কী কথা বলিবে । অকুতাপে তাহাকে বিদ্ধ করিল, কিন্তু কোনো প্রতিকার সে খুজিয়া পাইল না। রাত্রি হইল। চারু আজ সবিশেষ যত্ব করিয়া ভূপতির রাত্রের আহার সাজাইল এবং নিজে পাখা হাতে করিয়া বসিয়া রহিল। এমন সময় শুনিতে পাইল মন্দা উচ্চৈঃস্বরে ভাকিতেছে, "ব্রজ, ব্রজ ।” ব্রজ চাকর সাড়া দিলে জিজ্ঞাসা করিল, “অমলবাবুর খাওয়া হয়েছে কি।” ব্রজ উত্তর করিল, *হয়েছে।” মন্দা কহিল, “খাওয়া হয়ে গেছে অথচ পান নিয়ে গেলি নে যে ” মন্দা ব্রজকে অত্যন্ত তিরস্কার করিতে লাগিল । এমন সময়ে ভূপতি অন্তঃপুরে আসিয়া আহারে বসিল, চারু পাখা করিতে লাগিল। চারু আজ প্রতিজ্ঞ করিয়াছিল, ভূপতির সঙ্গে প্রফুল্ল স্নিগ্ধভাবে নানা কথা কহিবে। কথাবার্তা আগে হইতে ভাবিয়া প্রস্তুত হইয়া বসিয়া ছিল। কিন্তু মন্দার কণ্ঠস্বরে তাহার বিস্তৃত আয়োজন সমস্ত ভাঙিয়া দিল, আহারকালে ভূপতিকে সে একটি । কথাও বলিতে পারিল না। ভূপতিও অত্যন্ত বিমৰ্ষ অন্যমনস্ক হইয়া ছিল। সে ভালে৷ করিয়া খাইল না, চারু একবার কেবল জিজ্ঞাসা করিল, “কিছু খাচ্ছ না যে ” ভূপতি প্রতিবাদ করিয়া কহিল, “কেন। কম থাই নি তো।” শয়নঘরে উভয়ে একত্র হইলে ভূপতি কহিল, “আজ রাত্রে তুমি কী বলবে বলেছিলে ।” চারু কহিল, “দেখো, কিছুদিন থেকে মন্দার ব্যবহার আমার ভালো বোধ হচ্ছে না । ওকে এখানে রাখতে আমার আর সাহস হয় না।” ভূপতি। কেন, কী করেছে। চারু । অমলের সঙ্গে ও এমনি ভাবে চলে যে, সে দেখলে লজ্জা হয় । ভূপতি হাসিয়া উঠিয়া কহিল, “হা, তুমি পাগল হয়েছ! আমল ছেলেমানুষ । সেদিনকার ছেলে—” -- চারু। তুমি তো ঘরের খবর কিছুই রাখ না, কেবল বাইরের খবর কুড়িয়ে বেড়াও । যাই হোক, বেচারা দাদার জন্তে আমি ভাবি । তিনি কখন খেলেন না খেলেন মন্দা তার কোনো খোজও রাখে না, অথচ অমলের পান থেকে চুন খসে গেলেই চাকরবাকরদের সঙ্গে বকবিকি ক’রে অনর্থ করে।