পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ९० ॐ শুশলক উমাপতিকে কহিল, “তোমার স্ত্রীকে আমাদের এখানে আনিয়া রাখে-না— সমবয়সি স্ত্রীলোক কেহ কাছে নাই, চারুর নিশ্চয়ই ভারি ফাকা ঠেকে।” স্ত্রীসঙ্গের অভাবই চারুর পক্ষে অত্যন্ত শোকাবহ, সম্পাদক এইরূপ বুঝিল এবং শুশলকজায়া মন্দাকিনীকে বাড়িতে আনিয়া সে নিশ্চিন্ত হইল । যে সময়ে স্বামী স্ত্রী প্রেমোন্মেষের প্রথম অরুণালোকে পরস্পরের কাছে অপরূপ মহিমায় চিরনূতন বলিয়া প্রতিভাত হয়, দাম্পত্যের সেই স্বর্ণপ্রভামণ্ডিত প্রত্যুষকাল অচেতন অবস্থায় কখন অতীত হইয়া গেল কেহ জানিতে পারিল না। নূতনত্বের স্বাদ না পাইয়াই উভয়ে উভয়ের কাছে পুরাতন পরিচিত অভ্যস্ত হইয়া গেল। লেখাপড়ার দিকে চারুলতার একটা স্বাভাবিক ঝোক ছিল বলিয়া তাহার দিনগুলা অত্যন্ত বোঝা হইয়া উঠে নাই। সে নিজের চেষ্টায় নানা কৌশলে পড়িবার বন্দোবস্ত করিয়া লইয়াছিল। ভূপতির পিসতুতো ভাই অমল থার্ড-ইয়ারে পড়িতেছিল, চারুলত৷ তাহাকে ধরিয়া পড়া করিয়া লইত ; এই কর্মটুকু আদায় করিয়া লইবার জন্য অমলের অনেক আবদার তাহাকে সহ করিতে হইত। তাহাকে প্রায়ই হোটেলে খাইবার খোরাকি এবং ইংরেজি সাহিত্যগ্রন্থ কিনিবার খরচ জোগাইতে হইত। অমল মাঝে মাঝে বন্ধুদের নিমন্ত্ৰণ করিয়া খাওয়াইত, সেই যজ্ঞ-সমাধার ভার গুরুদক্ষিণার স্বরূপ চারুলতা নিজে গ্রহণ করিত। ভূপতি চারুলতার প্রতি কোনো দাবি করিত না, কিন্তু সামান্ত একটু পড়াইয়া পিসতুতো ভাই অমলের দাবির অস্ত ছিল না। তাহ লইয়া চারুলতা প্রায় মাঝে মাঝে কৃত্রিম কোপ এবং বিদ্রোহ প্রকাশ করিত ; কিন্তু কোনো একটা লোকের কোনো কাজে আসা এবং স্নেহের উপত্রব সহ করা তাহার পক্ষে অত্যাবশ্বক হইয়া উঠিয়াছিল। অমল কহিল, “বোঠান, আমাদের কালেজের রাজবাড়ির জামাইবাবু রাজঅন্তঃপুরের খাস হাতের বুননি কাপেটের জুতো পরে আসে, আমার তো সহ হয় না— একজোড়া কাপেটের জুতো চাই, নইলে কোনোমতেই পদমর্যাদা রক্ষা করতে পারছি নে ৷” চারু। হা, তাই বৈকি! আমি বসে বসে তোমার জুতো সেলাই করে মরি। দাম দিচ্ছি, বাজার থেকে কিনে আনো গে যাও। অমল বলিল, “সেটি হচ্ছে না।” চারু জুতা সেলাই করিতে জানে না, এবং অমলের কাছে সে কথা স্বীকার করিতেও চাহে না । কিন্তু তাহার কাছে কেহ কিছু চায় না, অমল চায়– সংসারে সেই একমাত্র প্রার্থীর প্রার্থনা রক্ষা না করিয়া সে থাকিতে পারে না। অমল যে সময়