পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ტ\ყ ი. রবীন্দ্র-রচনাবলী বিণ্ড। কী বলে দেখি । ফাগুলাল। আমাদের খবর নেবার জন্তে ওরা তোমাকে চর রেখেছিল। বিশু। সবাই জানতিস যদি তো আমাকে জ্যাস্ত রাখলি কেন । ফাগুলাল ৷ এও জানি এ কাজ তোমার দ্বারা হল না । চন্দ্র। এমন আরামের কাজেও টিকতে পারলে না, বেয়াই ? বিশু। আরামের কাজ ? একটা সজীব দেহ, তার পিছনে পৃষ্ঠত্রণ হয়ে লেগে থাকা । বললুম, “দেশে যাব, শরীর বড়ো খারাপ। সর্দার বললেন, ‘আহা, এত খারাপ শরীর নিয়ে দেশে যাবেই বা কেমন করে। তবু চেষ্টা দেখো । চেষ্টা দেখলুম। শেষে দেখি যক্ষপুরীর কবলের মধ্যে ঢুকলে তার হা বন্ধ হয়ে যায়, এখন তার জঠরের মধ্যে যাবার একটি পথ ছাড়া আর পথই নেই। আজ তার সেই আশাহীন আলোহীন জঠরের মধ্যে তলিয়ে গেছি। এখন তোতে-আমাতে তফাত এই যে, সর্দার তোকে যতটা অবজ্ঞা করে আমাকে তার চেয়েও বেশী। ছেড়া কলাপাতার চেয়ে ভাঙা ভাড়ের প্রতি মামুষের হেলা । ফাগুলাল । দুঃখ কী, বিশুদাদা। আমরা তো তোমাকে মাথায় করে রেখেছি। বিশু। প্রকাশ পেলেই মারা যাব । তোদের আদর পড়ে যেখানে সর্দারের দৃষ্টি পড়ে সেখানেই, সোনাব্যাঙ যতই মক্‌মক্‌ শব্দে কোলাব্যাঙের অভ্যর্থনা করে, সেটা কানে গিয়ে পৌছয় বোড়াসাপের । চন্দ্রা। কতদিনে তোমাদের কাজ ফুরবে ? বিশু। পাজিতে তো দিনের শেষ লেখে না। এক দিনের পর দু দিন, দু দিনের পর তিন দিন ; স্বভৃঙ্গ কেটেই চলেছি, এক হাতের পর দু হাত, দু হাতের পর তিন হাত । তাল তাল সোনা তুলে আনছি, এক তালের পর দু তাল, দু তালের পর তিন তাল। যক্ষপুরে অঙ্কের পর অঙ্ক সার বেঁধে চলেছে, কোনো অর্থে পৌছয় না। তাই ওদের কাছে আমরা মানুষ নই, কেবল সংখ্যা । ফাগুভাই, তুমি কোন সংখ্যা। ফাগুলাল। পিঠের কাপড়ে দাগ আছে, আমি ৪৭ ফ। বিশু। আমি ৬৯ ঙ । গায়ে ছিলুম মানুষ, এখানে হয়েছি দশপচিশের ছক । বুকের উপর দিয়ে জুয়োখেলা চলছে। চন্দ্র। বেয়াই, ওদের সোনা তো অনেক জমল, আরো কি দরকার। বিশু। দরকার বলে পদার্থের শেষ আছে। খাওয়ার দরকার আছে, পেট ভরিয়ে তার শেষ পাওয়া যায় ; নেশার দরকার নেই, তার শেষও নেই। ওই সোনার তালগুলো-যে মদ, আমাদের যক্ষরাজের নিরেট মদ । বুঝতে পারলে না ?