পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাপমোচন వి(t আনমনা গো আনমনা, তোমার কাছে আমার বাণীর মাল্যথানি আনিব না । বার্তা আমার ব্যর্থ হবে, সত্য আমার বুঝবে কবে, তোমারে মন জানিব না । লগ্ন যদি হয় অমুকুল মৌনমধুর সাঝে নয়ন তোমার মগ্ন যখন মান আলোর মাঝে, দেব? তোমায় শাস্ত স্বরের সাত্বনা । ছন্দে গাথা বাণী তখন পড়ব তোমার কানে মন্দমৃদুল তানে, ঝিল্লি যেমন শালের বনে নিদ্রানীরব রাতে অন্ধকারের জপের মালায় একটানা স্বর গাথে— একলা আমি বিজন প্রাণের প্রাঙ্গণে প্রান্তে বসে একমনে একে যাব আমার গানের আলপনা। মহিষী বললে, “প্রিয়প্রসাদ থেকে আমার দুই চক্ষু চিরদিনই কি থাকবে বঞ্চিত । অন্ধতার চেয়ে এ যে বড়ো অভিশাপ ।” অভিমানে মহিষী মুখ ফেরালে । রাজা বললে, “কাল চৈত্রসংক্রান্তি । নাগকেশরের বনে নিভৃতে সখাদের সঙ্গে আমার নৃত্যের দিন। প্রাসাদশিখর থেকে দেখে চেয়ে ।” মহিষীর দীর্ঘনিশ্বাস পড়ল। বললে, “চিনব কী করে।” রাজা বললে, “যেমন খুশি কল্পনা করে নিয়ো । সেই কল্পনাই হবে সত্য ।” হায় রে, ওরে যায় না কি জানা । নয়ন ওরে খুজে বেড়ায়, পায় না ঠিকানা । অলখ পথেই যাওয়া-আসা, শুনি চরণধ্বনির ভাষা, গন্ধে শুধু হাওয়ায় হাওয়ায় রইল নিশান । কেমন করে জানাই তারে, বসে অাছি পথের ধারে । প্রাণে এল সন্ধ্যাবেলা আলোছায়ার রঙিন খেলা, ঝরে-পড়া বকুলদলে বিছায় বিছানা ॥