পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী سرانی (د পুরোহিত। ওই দেখো, ওই দেখো মন্ত্রী ! এরই মধ্যে রথটা রাজপথ থেকে নেমে পড়েছে। কোথায় কোন পল্লীর উপরে পড়বে কিছুই বলা যায় না। সৈনিক । ওই-যে ধনপতির দল ওখান থেকে চীৎকার করে আমাদের ডাকছে। রথটা যেন ওদেরই ভাণ্ডার লক্ষ্য করে চলেছে । ওরা ভয় পেয়ে গেছে । চলো চলো, ওদের রক্ষা করি গে। মন্ত্রী। নিজেদের রক্ষা করে, তার পরে অন্য কথা। আমার তো মনে হচ্ছে রথটা ঠিক তোমাদের অস্ত্রশালার দিকে ঝুকেছে, ওর আর কিছু চিহ্ন বাকি থাকবে না। ওই দেখো । সৈনিক। উপায় ? মন্ত্রী। ওদের সঙ্গে মিলে রশি ধরো-সে— তা হলে রক্ষা পাবার পথে রথের বেগটাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। আর দ্বিধা করবার সময় নেই। [ প্রস্থান সৈনিক। ( পরম্পর) কী করবে। ঠাকুর, তুমি কী করবে। পুরোহিত। বীরগণ, তোমরা কী করবে। সৈনিক। জানি নে, রশি ধরব না লড়াই করব! ঠাকুর, তুমি কী করবে। পুরোহিত। জানি নে, রশি ধরব না আবার শাস্ত্র আওড়াতে বসব ! ১ সৈনিক। শুনতে পাচ্ছ— হুড়মুড় শব্দে পৃথিবীটা যেন ভেঙেচুরে পড়ছে। ২ সৈনিক। চেয়ে দেখো, ওরা টানছে বলে মনেই হচ্ছে না। রথটাই ওদের ঠেলে নিয়ে চলেছে। ৩ সৈনিক। পুরুতঠাকুর, দেখছ রথটা যেন বেঁচে উঠেছে। কী রকম হেঁকে চলেছে। এতবার রথযাত্রা দেখেছি, ওঁর এরকম সজীবমূতি কখনো দেখি নি। এতকাল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চলেছিল, আজ জেগে চলেছে। তাই আমাদের পথ মানছে না, নিজের পথ বানিয়ে নিচ্ছে । ২ সৈনিক। কিন্তু গেল যে সব । রথযাত্রার এমন সর্বনেশে উৎসব তে কোনোদিন দেখি নি। ওই যে কবি আসছে, ওকে জিজ্ঞাসা করো-না, এ-সবের মানে কী। পুরোহিত। আমরাই বুঝতে পারলুম না, কবি বুঝতে পারবে ? ওরা তো কেবল বানিয়ে কথা বলে, সনাতন শাস্ত্রের কথা জানেই না । ১ সৈনিক। শাস্ত্রের কথাগুলো কোনকালে মরে গেছে ঠাকুর । তাই তোমাদের কথা তো আর থাটে না দেখি। ওদের যে সব তাজা কথা তাই শুনলে বিশ্বাস হয়।