পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ઉ ૨૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী থেকে আদেশ নিয়ে এসে ; এবং প্রকৃত দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত হয়ে এমন দক্ষতার সঙ্গে সব ব্যবস্থা করলেন যে অনেকেরই মনে হয়েছিল, তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করে তুললেন। শিক্ষা ও মানসিক সংস্কারের ব্যবস্থা এতদিন অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, এখন আবার সে-সব মহারাজের উৎসাহ পাচ্ছে। আধুনিক প্রণালীতে অনেক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা তো হয়েছেই, তা ছাড়া নিয়মিতভাবে যোগ্যতম ছাত্রদের বিদেশে পাঠানো হচ্ছে টেকৃনিকাল শিক্ষালাভের জন্য । আমাদের কবি ও ঋষিদের স্মৃতি এতদিন তাদের ভক্তদের প্রাণের মধ্যেই বাসা বেঁধে ছিল ; এখন সেই স্মৃতিকে বহির্জগতে রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা শুভ লক্ষণ ; এর থেকে বোঝা যায়, আমাদের অতীত গৌরবের চেতনা জাতির প্রাণের মধ্যে উদবুদ্ধ হচ্ছে। সমস্ত পারস্তবাসী ও বিদেশী পারস্তবন্ধুদের মনে আশা হয়েছে যে, এই অদ্বিতীয় সম্রাটের সুদক্ষ নেতৃত্বে পারস্তদেশ আবার জগতের কল্যাণসাধনের শক্তি নিয়ে আবিভূত হবে। আশা করি, ডক্টর ঠাকুরকে এই-যে আমাদের প্রাণভরা অভিনন্দন জ্ঞাপন করলাম, এর জন্য র্তার স্পর্শভীরু স্বভাবে কিছু আঘাত লাগলেও তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। যদিও জানি ‘অলংকারবিহীন সৌন্দর্যই সুন্দরতম অলংকার তবুও তার প্রতি আমাদের যে ভক্তি তা একটু নিবেদন না করে পারলাম না। আমাদের ভরসা আছে, ডক্টর ঠাকুর তার এই ভ্রমণে আনন্দ পাবেন, এবং সত্যকারের শ্রেষ্ঠ জগদগুরুর প্রাপ্য যে শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা পারস্তে তার কোথাও কোনো অভাবই হবে না। কবির উত্তর পারস্তের ভ্রাতৃগণ, আমার সম্বন্ধে আপনাদের অনুগ্রহবাণীর জন্য আমি আস্তরিক কৃতজ্ঞ। আপনাদের কাছে আসাটা আমার জীবনে একটা বড়ে সুযোগ, এ কথা নিশ্চয় করে বলতে পারি। এই প্রথম নিবিড়ভাবে পারস্তের স্পর্শ অনুভব করা গেল। আর যে-কদিন আপনাদের দেশে থাকব তার মধ্যেই পারস্তবাসীদের সঙ্গে আরো গভীরতর পরিচয় -সাধনের আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি । 總 আমি কবি— আমি সেই কবিসংঘের একজন যাদের বাণী মনুষ্যত্বের অন্তরে পৌঁছনোর পথ খুজে নেয় কোলাহলময় বক্তৃতার মধ্য দিয়ে, নয়, অনস্তের আলয় যে গভীর স্তব্ধতা তারই মধ্য দিয়ে। প্রচার করা বা শিক্ষা দেওয়া আমার কাজ নয়— আমি আছি প্রাণের আহবানে সাড়া দেবার কাজে, অমৃভূতির ভাষায়, সৌন্দর্যের ভাষায় ।