পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ 8›ማ শক্তি গোপালের যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। অতএব হার্মোনিয়মটি সে অবিলম্বে অধিকার করিয়া লইল, বলিয়। রাখিল, “ফিরিয়া চাহিলে আর কিন্তু পাইবে না।” গোপালকে যখন রসিক ডাক দিয়াছিল তখন নিশ্চয় জানিয়াছিল সে ডাক অন্তত আরো একজনের কানে গিয়া পৌছিয়াছে। কিন্তু বাহিরে আজ তাহার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেল না। তখন রসিক গোপালকে বলিল, “সৈরি কোথায় আছে একবার ডাকিয়া আন তো।” গোপাল ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “সৈরি বলিল তাহাকে এখন বড়ি শুকাইতে দিতে হইবে, তাহার সময় নাই।” রসিক মনে মনে হাসিয়া কহিল, “চল দেখি সে কোথায় বড়ি শুকাইতেছে।” রসিক আঙিনার মধ্যে প্রবেশ করিয়া দেখিল, কোথাও বড়ির নামগন্ধ নাই। সৌরভ তাহদের পায়ের শব্দ পাইয়। আর-কোথাও লুকাইবার উপায় না দেখিয়া তাহাদের দিকে পিঠ করিয়া মাটির প্রাচীরের কোণ ঠেসিয়া দাড়াইল । রসিক তাহার কাছে গিয়া তাহাকে ফিরাইবার চেষ্টা করিয়া বলিল, "রাগ করেছিস সৈরি ?” সে আঁকিয়া বাকিয়া রসিকের চেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করিয়া দেয়ালের দিকেই মুখ করিয়া রহিল। একদা রসিক আপন খেয়ালে নানা রঙের স্থতা মিলাইয়া নানা চিত্রবিচিত্র করিয়া একটা কাথা সেলাই করিতেছিল। মেয়েরা যে র্কাথা সেলাই করিত তাহার কতকগুলা বাধা নকশা ছিল – কিন্তু রসিকের সমস্তই নিজের মনের রচনা । যখন এই সেলাইয়ের ব্যাপার চলিতেছিল তখন সৌরভী আশ্চর্য হইয়া একমনে তাহা দেখিত— সে মনে করিত, জগতে কোথাও এমন আশ্চর্য র্কাথা আজ পর্যস্ত রচিত হয় নাই। প্রায় যখন র্কাথা শেষ হইয়া আসিয়াছে এমন সময়ে রসিকের বিরক্তি বোধ হইল, সে আর শেষ করিল না । ইহাতে সৌরভ মনে ভারি পীড়া বোধ করিয়াছিল— এইটে শেষ করিয়া ফেলিবার জন্য সে রসিককে কতবার যে কত সামুনয় অনুরোধ করিয়াছে তাহার ঠিক নাই। আর ঘণ্টা দুই-তিন বসিলেই শেষ হইয়া যায়, কিন্তু রসিকের যাহাতে গা লাগে না তাহাতে তাহাকে প্রবৃত্ত করাইতে কে পারে। হঠাৎ এতদিন পরে রসিক কাল রাত্রি জাগিয়া সেই কাথাটি শেষ করিয়াছে। রসিক বলিল, “সৈরি, সেই কথাটা শেষ করিয়াছি, একবার দেখবি না ?” অনেক কষ্ট্রে সৌরভীর মুখ ফিরাইতেই সে আঁচল দিয়া মুখ বাপিয়া ফেলিল । তখন যে তাহার দুই কপোল বাহিয়া জল পড়িতেছিল, সে জল যে দেখাইবে কেমন করিয়া। সৌরভীর সঙ্গে তাহার পূর্বের সহজ সম্বন্ধ স্থাপন করিতে রসিকের যথেষ্ট সময়