পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१९ রবীন্দ্র-রচনাবলী যায় সেখান থেকেই উৎস ওঠে, তাই এর এই নাম— উংসজননী। কলকাতার ধারে গঙ্গা যেরকম ক্লিষ্ট কলুষিত শৃঙ্খলজৰ্জর, এ সেরকম নয়। গঙ্গাকে কলকাতা কিংকরী করেছে, সখী করে নি, তাই অবমানিত নদী হারিয়েছে তার রূপলাবণ্য। এখানকার এই পুরবাসিনী নদী গঙ্গার তুলনায় অগভীর ও অপ্রশস্ত বটে, কিন্তু এর স্বস্থ সৌন্দর্য নগরের হৃদয়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে আনন্দ বহন করে । এই নদীর উপরকার একটি ব্রিজ দেখতে এলুম, তার নাম আলিবদাঁ-খার পুল। আলিবর্দী শা-আব্বাসের সেনাপতি, বাদশার হুকুমে এই পুল তৈরি করেছিলেন। পৃথিবীতে আধুনিক ও প্রাচীন অনেক ব্রিজ আছে, তার মধ্যে এই কীর্তিটি অসাধারণ। বহুখিলানওয়ালা তিন-তলা এই পুল ; শুধু এটার উপর দিয়ে পথিক পার হয়ে যাবে বলে এ তৈরি হয় নি— অর্থাৎ এ শুধু উপলক্ষ নয়, এও স্বয়ং লক্ষ্য। এ সেই দিলরিয়া যুগের রচনা যা আপনার কাজের তাড়াতেও আপন মর্যাদা ভুলত না। ব্রিজ পার হয়ে গেলুম এখানকার আর্মানি গির্জায়। গির্জার বাহিরে ও অঙ্গনে ভিড় জমেছে । El ভিতরে গেলেম। প্রাচীন গির্জা। উপাসনা-ঘরের দেয়াল ও ছাদ চিত্রিত, অলংকৃত। দেয়ালের নীচের দিকটায় সুন্দর পারসিক টালির কাজ, বাকি অংশটায় বাইবেল-বণিত পৌরাণিক ছবি অঁাকা । জনশ্রুতি এই যে, কোনো ইটালিয়ন চিত্রকর ভ্রমণ করতে এসে এই ছবিগুলি একেছিলেন। তিনশো বছর হয়ে গেল, শা-আব্বাস রুশিয়া থেকে বহু সহস্র আর্মানি আনিয়ে ইস্পাহানে বাস করান। তারা কারিগর ছিল ভালো । তখনকার দেশবিজয়ী রাজার শিল্পদ্রব্যের সঙ্গে শিল্পীদেরও লুঠ করতে ছাড়তেন না। শা-আব্বাসের মৃত্যুর পর তাদের উপর উৎপাত আরম্ভ হল। অবশেষে নাদির শাহের আমলে উপন্দ্রব এত অসহ্য হয়ে উঠল যে টিকতে পারলে না। সেই সময়েই আর্মানির প্রথম ভারতবর্ষে পালিয়ে আসে। বর্তমান বাদশাহের আমলে তাদের কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু সে কালে কারুনৈপুণ্য সম্বন্ধে তাদের যে খ্যাতি ছিল এখন তার আর কিছু বাকি আছে বলে বোধ হল না । * বাজারের মধ্য দিয়ে বাড়ি ফিরলুম। আজ কী-একটা পরবে দোকানের দরজা সব বন্ধ। এখানকার স্বদীর্ঘ চিনার-বৗখিকায় গিয়ে পড়লুম। বাদশাহের আমলে এই রাস্তার মাঝখান দিয়ে টালি-বাধানে নালায় জল বইত, মাঝে মাঝে খেলত ফোয়ারা, আর ছিল ফুলের কেয়ারি। দরকারের জিনিসকে করেছিল আদরের জিনিস ; পথেরও ছিল আমন্ত্রণ, আতিথ্য । , р