পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী سC)\Ob\ কেবলই মনে হইতে লাগিল, আহ, এই বয়সের এমন ছেলেকে ফেলিয়া ইহার মা যখন মরিল তখন তাহার প্রাণ না জানি কেমন করিতেছিল। আহার সারিয়াই বেণু কহিল, “মাস্টারমশায়, আমাকে আজ একটু সকাল-সকাল যাইতে হইবে। আমার দুই-একজন বন্ধুর আসিবার কথা আছে।” বলিয়া পকেট হইতে সোনার ঘড়ি খুলিয়। একবার সময় দেখিয়া লইল ; তাহার পরে সংক্ষেপে বিদায় লইয়া জুড়িগাড়িতে চড়িয়া বসিল । হরলাল তাহার বাসার দরজার কাছে দাড়াইয়া রহিল। গাড়ি সমস্ত গলিকে কঁপাইয়া দিয়া মুহূর্তের মধ্যেই চোখের বাহির হইয়া গেল । মা কহিলেন, “হরলাল, উহাকে মাঝে মাঝে ডাকিয়া আনিস। এই বয়সে উহার মা মারা গেছে মনে করিলে আমার প্রাণটা কেমন করিয়া উঠে।” হরলাল চুপ করিয়া রহিল। এই মাতৃহীন ছেলেটিকে সাম্বন দিবার জন্ত সে কোনো প্রয়োজন বোধ করিল না। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মনে মনে কহিল, ‘বাস, এই পর্যস্ত। আর কখনো ডাকিব না। একদিন পাঁচ টকা মাইনের মাস্টারি করিয়াছিলাম বটে— কিন্তু আমি সামান্ত হরলাল মাত্র । "ל একদিন সন্ধ্যার পর হরলাল আপিস হইতে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, তাহার একতলার ঘরে অন্ধকারে কে একজন বসিয়া আছে । সেখানে যে কোনো লোক আছে তাহা লক্ষ্য না করিয়াই সে বোধ হয় উপরে উঠিয়া যাইত, কিন্তু দরজায় ঢুকিয়াই দেখিল এসেন্সের গন্ধে আকাশ পূর্ণ। ঘরে প্রবেশ করিয়া হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “কে, মশায়।” বেণু বলিয়া উঠিল, “মাস্টারমশায়, আমি।” হরলাল কহিল, “এ কী ব্যাপার। কখন আসিয়াছ।” বেণু কহিল, “অনেকক্ষণ আসিয়াছি। আপনি যে এত দেরি করিয়৷ আপিস হইতে ফেরেন তাহা তো আমি জানিতাম না।” বহুকাল হইল সেই-যে নিমন্ত্রণ খাইয়া গেছে তাহার পরে আর একবারও বেণু এ বাসায় আসে নাই। বলা নাই, কহা নাই, আজ হঠাৎ এমন করিয়া সে যে সন্ধ্যার সময় এই অন্ধকার ঘরের মধ্যে অপেক্ষা করিয়া বসিয়া আছে ইহাতে হরলালের মন উদবিগ্ন হইয়া উঠিল। উপরের ঘরে গিয়া বাতি জালিয়া দুইজনে বসিল । হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “সব ভালো তো ? কিছু বিশেষ খবর আছে ?”