পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২২৩ মাঝখানে আসিয়া ছায়া ফেলিয়া গ্রহণ লাগাইয়া দিত। হঠাৎ মন্দার এই পরিবর্তন লইয়া চারু তাহার অসাক্ষাতে যে পরিহাস করিবে সে অবসরটুকু পাওয়া শক্ত হইল। মন্দার এই অনাহূত প্রবেশ চারুর কাছে যত বিরক্তিকর বোধ হইত অমলের কাছে ততটা বোধ হয় নাই, এ কথা বলা বাহুল্য। বিমুখ রমণীর মন ক্রমশ তাহার দিকে যে ফিরিতেছে, ইহাতে ভিতরে ভিতরে সে একটা আগ্রহ অনুভব করিতেছিল। কিন্তু চারু যখন দূর হইতে মন্দাকে দেখিয়া তীব্র মুদুস্বরে বলিত “ঐ আসছেন” তখন অমলও বলিত, “তাই তো, জালালে দেখছি।” পৃথিবীর অন্ত-সকল সঙ্গের প্রতি অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করা তাহদের একটা দস্তুর ছিল ; অমল সেটা হঠাৎ কী বলিয়া ছাড়ে। অবশেষে মন্দাকিনী নিকটবর্তিনী হইলে অমল যেন বলপূর্বক সৌজন্য করিয়া বলিত, “তার পরে, মন্দা-বউঠান, আজ তোমার পানের বাটায় বাটপাড়ির লক্ষণ কিছু দেখলে!” মন্দা। যখন চাইলেই পাও ভাই, তখন চুরি করবার দরকার ! অমল । চেয়ে পাওয়ার চেয়ে তাতে সুখ বেশি। মন্দা । তোমরা কী পড়ছিলে পড়ো-না, ভাই। থামলে কেন । পড়া শুনতে অামার বেশ লাগে । ইতিপূর্বে পাঠাকুরাগের জন্য খ্যাতি অর্জন করিতে মন্দার কিছুমাত্র চেষ্টা দেখা যায় নাই, কিন্তু ‘কালোহি বলবত্তরঃ’ । চারুর ইচ্ছা নহে অরসিকা মন্দার কাছে অমল পড়ে, অমলের ইচ্ছা মন্দাও তাহার লেখা শোনে । চারু । অমল কমলাকাস্তের দপ্তরের সমালোচনা লিখে এনেছে, সে কি তোমার— মন্দা। হলেমই বা মুখখু, তবু শুনলে কি একেবারেই বুঝতে পারি নে। তখন আর-একদিনের কথা অমলের মনে পড়িল । চারুতে মন্দাতে বিস্তি থেলিতেছে, সে তাহার লেখা হাতে করিয়া খেলাসভায় প্রবেশ করিল। চারুকে শুনাইবার জন্য সে অধীর, খেলা ভাঙিতেছে না দেখিয়া সে বিরক্ত। অবশেষে বলিয়া উঠিল, “তোমরা তবে খেলো বউঠান, আমি অখিলবাবুকে লেখাটা শুনিয়ে আসি গে।” চারু অমলের চাদর চাপিয়া কহিল, “আtঃ, বোসো-না, যাও কোথায়।” বলিয়া তাড়াতাড়ি হারিয়া খেলা শেষ করিয়া দিল । মন্দা বলিল, “তোমাদের পড়া আরম্ভ হবে বুঝি ? তবে আমি উঠি ।” চারু ভদ্রতা করিয়া কহিল, “কেন, তুমিও শোনে-ন ভাই।” মন্দা। না ভাই, আমি তোমাদের ও-সব ছাইপাশ কিছুই বুঝি নে ; আমার