পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী ধনপতি। শুনেছি। কিন্তু মন্ত্রী এ-সব কাজ তো এতদিন— মন্ত্রী। জানি, এতদিন আমাদের পুরোহিত ঠাকুররাই এ-সব কাজ চালিয়েছেন। কিন্তু তখন যে এরা স্বাধীন সাধনার জোরে নিজে চলতেন, চালাতেও পারতেন। এখন এর তোমাদেরই দ্বারে অচল হয়ে বাধা, এখন এদের হাতে কিছুই চলবে না। ধনপতি। অন্ত অন্ত বারে রাজা সেনাপতি রাজপারিষদ সকলেই রথের রশিতে হাত লাগাতেন, কখনো তো বাধা ঘটে নি। তখন আমরা তো কেবল চাকায় তেল জুগিয়ে এসেছি, রশিতে টান দিই নি তৃে। মন্ত্রী। দেখো শেঠজি, রথযাত্রাট। আমাদের একটা পরীক্ষা । কাদের শক্তিতে । সংসারটা সত্যিই চলছে বাবা মহাকালের রথচক্র ঘোরার দ্বারা সেইটেরই প্রমাণ হয়ে । থাকে। যখন পুরোহিত ছিলেন নেতা তখন তারা রশি ধরতে ন-ধরতে রথটা ঘুম ভাঙা সিংহের মতো ধড়ফড় করে নড়ে উঠত। এবারে যে কিছুতেই সাড়া দিল না। তার থেকে প্রমাণ হচ্ছে শাস্ত্রই বল, শস্ত্রই বল, সমস্ত অর্থহীন হয়ে পড়েছে— অর্থ এখন তোমারই হাতে। সেই তোমার সার্থক হাতটি আজ রথের রশিতে লাগাতে হবে । ধনপতি। আগে বরঞ্চ আমার দলের লোকে চেষ্টা করে দেখুক, যদি একটুখানি কেঁপেও ওঠে আমিও হাত দেব, নইলে সকল লোকের সামনে— মন্ত্রী। কেন আর দেরি করা শেঠজি। রাজ্যের সমস্ত লোক উপোস করে আছে, রথ মন্দিরে গিয়ে না পৌছলে কেউ জলগ্রহণ করবে না । তোমার চেষ্টাতেও যদি রথ ন চলে লজ্জ কিসের, স্বয়ং পুরোহিত রাজা সকলেরই চেষ্টা ব্যর্থ হল, দেশমৃদ্ধ লোক তো তা দেখেছে । ধনপতি। তার হলেন লোকপাল, আমরা হলুম পালের লোক ; জনসাধারণে র্তাদের বিচার করে একরকমে, আমাদের বিচার করে আর-এক রকমে। রথ যদি না চলে আমার লজ্জা আছে, কিন্তু রথ যদি চলে তা হলে আমার ভয় । তা হলে আমার সেই শুভদৃষ্টের স্পর্ধ কোনো লোক ক্ষমা করতে পারবেই না। তখন কাল থেকে তোমরাই ভাবতে বসবে আমাকে খর্ব করা যায় কী উপায়ে । মন্ত্রী। যা বলছ সবই সত্য হতে পারে, কিন্তু তবুও রথ চলা চাই। আর বেশিক্ষণ যদি দ্বিধা কর তা হলে দেশের লোক খেপে যাবে। ধনপতি। আচ্ছা, তবে চেষ্টা করে দেখি । কিন্তু যদি দৈবক্রমে আমার চেষ্টা সফল হয় তা হলে আমার অপরাধ নিয়ো না । ( দলের লোকদের প্রতি ) বলে। সিদ্ধিরস্তু !