পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

వరీ ఆ রবীন্দ্র-রচনাবলী ভূপতি। তোমরা মেয়েরা কিন্তু ভারি সন্দিগ্ধ তা বলতে হয়। চারু রাগিয়া বলিল, “আচ্ছা বেশ, আমরা সন্দিগ্ধ, কিন্তু বাড়িতে আমি এ-সমস্ত বেহায়াপনা হতে দেব না তা বলে রাখছি।” চারুর এ-সমস্ত অমূলক আশঙ্কায় ভূপতি মনে মনে হাসিল, খুশিও হইল। গৃহ যাহাতে পবিত্র থাকে, দাম্পত্যধর্মে আনুমানিক কাল্পনিক কলঙ্কও লেশমাত্র স্পর্শ ন৷ করে, এজন্য সাধবী স্ত্রীদের যে অতিরিক্ত সতর্কত, যে সন্দেহাকুল দৃষ্টিক্ষেপ, তাহার মধ্যে একটি মাধুর্য এবং মহত্ব আছে। ভূপতি শ্রদ্ধায় এবং স্নেহে চারুর ললাট চুম্বন করিয়া কহিল, "এ নিয়ে আর কোনো গোল করবার দরকার হবে না। উমাপদ ময়মনসিংহে প্রাকৃটিস করতে যাচ্ছে, মন্দাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে।” অবশেষে নিজের দুশ্চিন্তা এবং এই-সকল অপ্রতিকর আলোচনা দূর করিয়া দিবার জন্য ভূপতি টেবিল হইতে একটা খাত তুলিয়া লইয়া কহিল, “তোমার লেখা আমাকে শোনাও-না, চারু।” চারু খাত কাড়িয়া লইয়া কহিল, “এ তোমার ভালো লাগবে না, তুমি ঠাট্ট করবে ।” ভূপতি এই কথায় কিছু ব্যথা পাইল, কিন্তু তাহা গোপন করিয়া হাসিয়া কহিল, *আচ্ছা, আমি ঠাট্ট করব না, এমনি স্থির হয়ে শুনব যে তোমার ভ্রম হবে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি।” কিন্তু ভূপতি আমল পাইল না— দেখিতে দেখিতে খাতাপত্র নানা আবরণআচ্ছাদনের মধ্যে অন্তহিত হইয়া গেল । নবম পরিচ্ছেদ সকল কথা ভূপতি চারুকে বলিতে পারে নাই। উমাপদ ভূপতির কাগজখানির কর্মধ্যক্ষ ছিল। চাদ আদায়, ছাপাখানা ও বাজারের দেনা শোধ, চাকরদের বেতন দেওয়া, এ-সমস্তই উমাপদর উপর ভার ছিল। ইতিমধ্যে হঠাৎ একদিন কাগজওয়ালার নিকট হইতে উকিলের চিঠি পাইয়৷ ভূপতি আশ্চর্য হইয়া গেল। ভূপতির নিকট হইতে তাহাদের ২৭০০২ টাকা পাওনা জানাইয়াছে। ভূপতি উমাপদকে ভাকিয়া কহিল, “এ কী ব্যাপার! এ টাকা তে৷ আমি তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। কাগজের দেনা চার-পাচশোর বেশি তো হবার কথা নয় ।”