পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Obro রবীন্দ্র-রচনাবলী নন্দিনী । কোনো দিন ছিল ? সর্দার । হয়তো ছিল। নন্দিনী । এখন গেল কোথায় । সর্দার। বস্তুবাগীশ, পার তো বুঝিয়ে দাও, আমি চললুম। [ প্রস্থান নন্দিনী। ওকি, ওই সব ছায়াদের মধ্যে যে চেনা মুখ দেখছি। ওই তো নিশ্চয় আমাদের অকুপ আর উপমন্ত্য। অধ্যাপক, ওরা আমাদের পাশের গায়ের লোক দুই ভাই মাথায় যেমন লম্বা, গায়ে তেমনি শক্ত, ওদের সবাই বলে তাল-তমাল আষাঢ়চতুর্দশীতে আমাদের নদীতে বাচ খেলতে আসত। মরে যাই, ওদের এমন দশ কে করলে । ওই-যে দেখি শকুলু, তলোয়ারখেলায় সব্বার আগে পেত মালা অনূ—প, শকুলু—, এই দিকে চেয়ে দেখে, এই আমি, তোমাদের নন্দিন, ঈশানীপাড়ার নন্দিন। মাথা তুলে দেখলে না, চিরদিনের মতো মাথা হেঁট হয়ে গেছে। ওকি, কঙ্কু যে ! আহা, আহা, ওর মতো ছেলেকেও যেন আখের মতো চিবিয়ে ফেলে দিয়েছে। বড়ো লাজুক ছিল ; যে-ঘাটে জল আনতে যে তুম, তারি কাছে ঢালু পাড়ির পরে বসে থাকত, ভাণ করত যেন তীর বানাবার জন্য শর ভাঙতে এসেছে। দুষ্টমি ক'রে ওকে কত দুঃখ দিয়েছি । ও কস্কু, ফিরে চা আমার দিকে। হায় রে, অামার ইশারাতে যার রক্ত নেচে উঠত, সে আমার ডাকে সাড়াই দিলে না। গেল গো, আমাদের গায়ের সব আলো নিবে গেল। অধ্যাপক, লোহাটী ক্ষয়ে গেছে, কালো মরচেটাই বাকি ! এমন কেন হল । অধ্যাপক। নন্দিনী, যে-দিকটাতে ছাই, তোমার দৃষ্টি আজ সেই দিকটাতেই পড়েছে। একবার শিখার দিকে তাকাও, দেখবে তার জিহবা লকলক করছে। নন্দিনী । তোমার কথা বুঝতে পারছি নে । অধ্যাপক। রাজাকে তো দেখেছ ? তার মুর্তি দেখে শুনছি নাকি তোমার মন মুগ্ধ হয়েছে ? * নন্দিনী । হয়েছে বই-কি। সে-যে অদ্ভুত শক্তির চেহারা । অধ্যাপক। সেই অদ্ভূতটি হল যার জমা, এই কিস্তৃতটি হল তার খরচ। ওই ছোটোগুলো হতে থাকে ছাই, আর ওই বড়োটা জলতে থাকে শিখা। এই হচ্ছে বড়ো হবার তত্ত্ব। নন্দিনী । ও তো রাক্ষসের তত্ত্ব । অধ্যাপক। তত্ত্বর উপর রাগ করা মিছে। সে ভালোও নয়, মন্দও নয়। যেটা হয় সেটা হয়, তার বিরুদ্ধে যাও তো হওয়ারই বিরুদ্ধে যাবে।