পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ৩৭১ সে বলিয়া উঠিল, “আমি আর কিছুই চাই না— আমি এই স্বরঙ্গ হইতে, অন্ধকার হইতে, গোলকধাঁধা হইতে, এই সোনার গারদ হইতে, বাহির হইতে চাই। আমি আলোক চাই, আকাশ চাই, মুক্তি চাই।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “এই সোনার ভাণ্ডারের চেয়ে মূল্যবান রত্নভাণ্ডার এখানে আছে। একবার যাইবে না ?” m মৃত্যুঞ্জয় কহিল, “না, যাইব না।” সন্ন্যাসী কহিলেন, "একবার দেখিয়া আসিবার কৌতুহলও নাই ?” মৃত্যুঞ্জয় কহিল, “না, আমি দেখিতেও চাই না। অামাকে যদি কৌপীন পরিয়া ভিক্ষা করিয়া বেড়াইতে হয় তবু আমি এখানে এক মুহূর্তও কাটাইতে ইচ্ছা করি না।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “আচ্ছা, তবে এসো।” মৃত্যুঞ্জয়ের হাত ধরিয়া সন্ন্যাসী তাহাকে সেই গভীর কূপের সম্মুখে লইয়া গেলেন। তাহার হাতে সেই লিখনপত্র দিয়া কহিলেন, “এখানি লইয়া তুমি কী করিবে।” মৃত্যুঞ্জয় সে পত্ৰখানি টুকরা টুকরা করিয়া ছিড়িয়া কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করিল। কাতিক ১৩১৪ রাসমণির ছেলে S কালীপদর মা ছিলেন রাসমণি— কিন্তু তাহাকে দায়ে পড়িয়া বাপের পদ গ্রহণ করিতে হইয়াছিল। কারণ, বাপ মা উভয়েই মা হইয়া উঠিলে ছেলের পক্ষে সুবিধা হয় না। র্তাহার স্বামী ভবানীচরণ ছেলেকে একেবারেই শাসন করিতে পারেন না । তিনি কেন এত বেশি আদর দেন তাহা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি যে উত্তর দিয়া থাকেন তাহা বুঝিতে হইলে পূর্ব ইতিহাস জানা চাই। ব্যাপারখানা এই— শানিয়াড়ির বিখ্যাত বনিয়াদী ধনীর বংশে ভবানীচরণের জন্ম। ভবানীচরণের পিতা অভয়াচরণের প্রথম পক্ষের পুত্র খামাচরণ। অধিক বয়সে স্ত্রীবিয়োগের পর দ্বিতীয়বার যখন অভয়াচরণ বিবাহ করেন তখন তাহার শ্বশুর আলন্দি তালুকটি বিশেষ করিয়া তাহার কষ্কার নামে লিখাইয়া লইয়াছিলেন।