পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وا\ 8o কারণ সে চেলি পরিয়া, গহনা পরিয়া, কপালে চন্দন লেপিয়া, চুপ করিয়া বসিয়া আছে। ভাবী শ্বশুরকুলের প্রতি যে তাহার খুব একটা ভক্তি কিংবা অনুরাগ জন্মিতেছে, তাহ বলা যায় না । ইতিমধ্যে একটা সুবিধা হইল। বর সহসা তাহার পিতৃদেবের অবাধ্য হইয়া উঠিল। সে বাপকে বলিয়া বসিল, “কেনাবেচা-দরদামের কথা আমি বুঝি না, বিবাহ করিতে আসিয়াছি বিবাহ করিয়া যাইব ।” 犧 বাপ যাহাকে দেখিল তাহাকেই বলিল, “দেখেছেন মহাশয়, আজকালকার ছেলেদের ব্যবহার।” দুই-একজন প্রবীণ লোক ছিল, তাহারা বলিল, “শাস্ত্রশিক্ষা নীতিশিক্ষা একেবারে নাই, কাজেই ।” বর্তমান শিক্ষার বিষময় ফল নিজের সন্তানের মধ্যে প্রত্যক্ষ করিয়া রায়বাহাদুর হতোদ্যম হইয়া বসিয়া রহিলেন । বিবাহ একপ্রকার বিষন্ন নিরানন্দভাবে সম্পন্ন হইয়া গেল । শ্বশুরবাড়ি যাইবার সময় নিরুপমাকে বুকে টানিয়া লইয়া বাপ আর চোখের জল রাখিতে পারিলেন না। নিরু জিজ্ঞাসা করিল, “তারা কি আর আমাকে আসতে দেবে না, বাবা।” রামসুন্দর বলিলেন, "কেন আসতে দেবে না, মা । আমি তোমাকে নিয়ে আসব ।” झन्। রামসুন্দর প্রায়ই মেয়েকে দেখিতে ষান কিন্তু বেহাইবাড়িতে র্তার কোনো প্রতিপত্তি নাই। চাকরগুলো পর্যন্ত র্তাহাকে নিচু নজরে দেখে । অন্তঃপুরের বাহিরে একটা স্বতন্ত্র ঘরে পাচ মিনিটের জন্য কোনোদিন-বা মেয়েকে দেখিতে পান, কোনোদিনবা দেখিতে পান না । কুটুম্বগৃহে এমন করিয়া অপমান তো সহা যায় না। রামস্থদের স্থির করিলেন যেমন করিয়া হউক টাকাটা শোধ করিয়া দিতে হইবে । কিন্তু যে-ঋণভার কাধে চাপিয়াছে, তাহারি ভার সামলানো দুঃসাধ্য। খরচপত্রের অত্যন্ত টানাটানি পড়িয়াছে ; এবং পাওনাদারদের দৃষ্টিপথ এড়াইবার জন্য সর্বদাই নানারূপ হীন কৌশল অবলম্বন করিতে হইতেছে । এদিকে শ্বশুরবাড়ি উঠতে বসিতে মেয়েকে খোচা লাগাইতেছে। পিতৃগৃহের নিন্দ শুনিয়া ঘরে দ্বার দিয়া অশ্রুবিসর্জন তাহার নিত্যক্রিয়ার মধ্যে দাড়াইয়াছে। বিশেষত শাশুড়ীর আক্রোশ আর কিছুতেই মেটে না। যদি কেহ বলে, “আহ, কী ঐ । বউয়ের মুখখানি দেখিলে চোখ জুড়াইয়া যায়।” শাশুড়ী ঝংকার দিয়া উঠিয়৷ বলে, “শ্ৰী তো ভারি। যেমন ঘরের মেয়ে তেমনি শ্ৰী ।”