পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԾԵ-Եյս রবীন্দ্র-রচনাবলী খুলিয়া খরচ করা যাইতে পারে। রাসমণির কাছে কোনো উৎসাহ না পাওয়াতে ভোজটা বন্ধ রহিল। - কালীপদ এবার কলেজের কাছে একটি মেসে আশ্রয় পাইল । মেসের যিনি অধিকারী তিনি তাহাকে নীচের তলার একটি অব্যবহার্য ঘরে থাকিতে অনুমতি দিয়াছেন। কালীপদ বাড়িতে র্তাহার ছেলেকে পড়াইয়া দুইবেল। থাইতে পায়। এবং মেসের সেই সঁ্যাতসেঁতে অন্ধকার ঘরে তাহার বাসা। ঘরটার একটা মস্ত সুবিধা এই যে, সেখানে কালীপদর ভাগী কেহ ছিল না। স্বতরাং, যদিচ সেখানে বাতাস চলিত না তবু পড়াশুনা অবাধে চলিত। যেমনি হউক, সুবিধা-অসুবিধা বিচার করিবার অবস্থা কালীপদর নহে। এ মেসে যাহারা ভাড়া দিয়া বাস করে, বিশেষত যাহার। দ্বিতীয় তলের উচ্চলোকে থাকে, তাহাদের সঙ্গে কালীপদর কোনো সম্পর্ক নাই। কিন্তু সম্পর্ক না থাকিলেও সংঘাত হইতে রক্ষা পাওয়া যায় না। উচ্চের বজ্রাঘাত নিয়ের পক্ষে কতদূর প্রাণাস্তিক কালীপদর তাহ বুঝিতে বিলম্ব হইল না। ’ এই মেসের উচ্চলোকে ইন্দ্রের সিংহাসন যাহার তাহার পরিচয় আবশ্যক। তাহার নাম শৈলেন্দ্র। সে বড়োমানুষের ছেলে ; কলেজে পড়িবার সময় মেসে থাকা তাহার পক্ষে অনাবশ্বক— তবু সে মেসে থাকিতেই ভালোবাসিত। তাহাদের বৃহৎ পরিবার হইতে কয়েকজন স্ত্রী ও পুরুষ -জাতীয় আত্মীয়কে আনাইয়। কলিকাতায় একটা বাসা ভাড়া করিয়া থাকিবার জন্য বাড়ি হইতে অনুরোধ আসিয়াছিল— সে তাহাতে কোনোমতেই রাজি হয় নাই। সে কারণ দেখাইয়াছিল যে, বাড়ির লোকজনের সঙ্গে থাকিলে তাহার পড়াশুনা কিছুই হইবে না। কিন্তু আসল কারণটা তাহা নহে। শৈলেন্দ্র লোকজনের সঙ্গ খুবই ভালোবাসে কিন্তু আত্মীয়দের মুশকিল এই যে, কেবলমাত্র তাহদের সঙ্গটি লইয়৷ খালাস পাওয়া যায় না, তাহাজের নানা দায় স্বীকার করিতে হয় ; কাহারো সম্বন্ধে এটা করিতে নাই, কাহারো সম্বন্ধে ওটা না করিলে অত্যন্ত নিন্দার কথা। এইজন্ত শৈলেন্দ্রের পক্ষে সকলের চেয়ে সুবিধার জায়গা মেস। সেখানে লোক যথেষ্ট আছে অথচ তাহার উপর তাহাদের কোনো ভার নাই। তাহারা আসে যায়, হাসে, কথা কয় ; তাহারা নদীর জলের মতো, কেবলই বহিয়া চলিয়া যায় অথচ কোথাও লেশমাত্র ছিঙ্গ রাখে না । W শৈলেন্দ্রের ধারণা ছিল, সে লোক ভালো, যাহাকে বলে সহৃদয় । সকলেই জানেন, এই ধারণাটির মস্ত সুবিধা এই যে, নিজের কাছে ইহাকে বজায় রাখিবার জন্য ভালো