পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৮ রবীন্দ্র-রচনাবলী পান্থ শুধায়ে না মোরে তুমি মুক্তি কোথা, মুক্তি কারে কই, আমি তো সাধক নই, আমি গুরু নই। আমি কবি, আছি ধরণীর অতি কাছাকাছি, এ পারের খেয়ার ঘাটায়। সম্মুখে প্রাণের নদী জোয়ার-ভাটায় নিত্য বহে নিয়ে ছায়া আলো, মন্দ ভালো, ভেসে-যাওয়া কত কী যে, ভুলে-যাওয়া কত রাশি রাশি লাভক্ষতি কান্নাহাসি,— এক তীর গড়ি তোলে অন্য তীর ভাঙিয়া ভাঙিয়া ; সেই প্রবাহের পরে উষা ওঠে রঙিয়া রঙিয়া, পড়ে চন্দ্রালোকরেখা জননীর অঙ্গুলির মতো ; কৃষ্ণরাতে তারা যত জপ করে ধ্যানমন্ত্র ; অস্তস্বর্য রক্তিম উত্তরী ৰুলাইয়া চলে যায়, সে-তরঙ্গে মাধবীমঞ্চরি ভাসায় মাধুরীডালি, পাখি তার গান দেয় ঢালি । সে তরঙ্গনৃত্যছন্দে বিচিত্র ভঙ্গীতে চিত্ত যবে নৃত্য করে আপন সংগীতে এ বিশ্বপ্রবাহে, সে-ছন্দে বন্ধন মোর, মুক্তি মোর তাহে । রাথিতে চাহি না কিছু, অঁাকড়িয়া চাহি না রহিতে, ভাসিয়া চলিতে চাই সবার সহিতে বিরহমিলনগ্রন্থি খুলিয়া খুলিয়া, তরণীর পালখানি পলাতক বাতাসে তুলিয়া । হে মহাপথিক, অবারিত তব দশদিক ।