পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ \O\ర్ఫి বেণু কহিল, পড়াশুনা ক্রমে তাহার পক্ষে বড়োই একঘেয়ে হইয়া আসিয়াছে। কাহাতক সে বৎসরের পর বৎসর ওই সেকেণ্ড ইয়ারেই আটকা পড়িয়া থাকে। তাহার চেয়ে অনেক বয়সে-ছোটো ছেলের সঙ্গে তাহাকে একসঙ্গে পড়িতে হয়— তাহার বড়ে৷ লজ্জা করে। কিন্তু বাবা কিছুতেই বোঝেন না। হরলাল জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার কী ইচ্ছ।” বেণু কহিল, তাহার ইচ্ছা সে বিলাত যায়, বারিস্টার হইয়া আসে। তাহারই সঙ্গে একসঙ্গে পড়িত, এমনকি, তাহার চেয়ে পড়াশুনায় অনেক কাচা একটি ছেলে বিলাতে যাইবে স্থির হইয়া গেছে। হরলাল কহিল, “তোমার বাবাকে তোমার ইচ্ছা জানাইয়াছ ?” বেণু কহিল, “জানাইয়াছি। বাবা বলেন, পাস না করিলে বিলাতে যাইবার প্রস্তাব তিনি কানে আনিবেন না। কিন্তু আমার মন খারাপ হইয়া গেছে— এখানে থাকিলে আমি কিছুতেই পাস করিতে পারিব না।” হরলাল চুপ করিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল। বেণু কহিল, “আজ এই কথা লইয়৷ বাব। আমাকে যাহা মুখে আসিয়াছে তাহাই বলিয়াছেন। তাই আমি বাড়ি ছাড়িয়া চলিয়া আসিয়াছি । মা থাকিলে এমন কখনোই হইতে পারিত না।” বলিতে বলিতে সে অভিমানে কঁাদিতে লাগিল । হরলাল কহিল, “চলো আমি-সুদ্ধ তোমার বাবার কাছে যাই, পরামর্শ করিয়া যাহা ভালো হয় স্থির করা যাইবে।” বেণু কহিল, "না, আমি সেখানে যাইব না।” বাপের সঙ্গে রাগারগি করিয়া হরলালের বাড়িতে আসিয়া বেণু থাকিবে, এ কথাটা হরলালের মোটেই ভালো লাগিল না। অথচ আমার বাড়ি থাকিতে পরিবে না? এ কথা বলাও বড়ো শক্ত। হরলাল ভাবিল, আর-একটু বাদে মনটা একটু ঠাণ্ড হইলেই ইহাকে ভুলাইয়া বাড়ি লইয়া যাইব। জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি খাইয়৷ আসিয়াছ ?” বেণু কহিল, “না, আমার ক্ষুধা নাই— আমি আজ খাইব না।” হরলাল কহিল, “সে কি হয়।” তাড়াতাড়ি মাকে গিয়া কহিল, “মা, বেণু আসিয়াছে, তাহার জন্য কিছু খাবার চাই।” শুনিয়া মা ভারি খুশি হইয়া খাবার তৈরি করিতে গেলেন। হরলাল আপিসের কাপড় ছাড়িয়া মুখহাত ধুইয়। বেণুর কাছে আসিয়া বসিল। একটুখানি কাশিয়া একটুখানি ইতস্তত করিয়া সে বেণুর কাধের উপর হাত রাখিয়া কহিল, “বেণু, কাজটা