* শান্তিনিকেতন } Q>Q প্রস্তুত হই নে, পাছে তার লেশমাত্র প্রতিঘাত নিজের উপরে এসে পড়ে। তোমার অনন্ত অমৃতরূপ আনন্দরূপ আমার এই আমিটুকুর মধ্যে বোধ করতে পারি নে বলেই ভীরুতার অধম ভীরুতা এবং দীনতার অধম দীনতার মধ্যে দিনে দিনে তলিয়ে যেতে থাকি, দেহে-মনে গৃহে-গ্রামে সমাজে-স্বদেশে সর্বত্রই নিদারুণ নৈষ্ফল্য মঙ্গলকে পুনঃ পুনঃ বাধা দিতে থাকে, এবং অতি বীভৎস আচল জড়ত্ব ব্যাধিরূপে দুর্ভিক্ষরূপে, অনাচার ও অন্ধ সংস্কাররূপে, শতসহস্ৰ কাল্পনিক বিভীষিকারূপে, অকল্যাণ ও শ্ৰীহীনতাকে চারিদিকে স্তৃপাকার করে তোলে। হে ভূম, আজকের এই উৎসবের দিন আমাদের জাগরণের দিন হ’ক— আজ তোমার এই আকাশে আলোকে বাতাসে উদবোধনের বিপুল বাণী উদ্গীত হতে থাক, আমরা অতি দীর্ঘ দীনতার নিশাবসানে নেত্র উন্মীলন করে জ্যোতির্ময় লোকে নিজেকে অমৃতস্য পুত্রা বলে অনুভব করি ; আনন্দসংগীতের তালে তালে নিৰ্ভয়ে যাত্রা করি সত্যের পথে, আলোকের পথে, অমৃতের পথে ; আমাদের এই যাত্রার পথে আমাদের মুখে চক্ষে, আমাদের বাক্যে মনে, আমাদের সমস্ত কর্মচেষ্টায়, হে রুদ্র, তোমার প্রসন্নমুখের জ্যোতি উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক। আমরা এখানে সকলে যাত্রীর দল– তোমার আশীৰ্বাদ লাভের জন্য দাড়িয়েছি ; সম্মুখে আমাদের পথ, আকাশে নবীন সূর্যের আলোক, ‘সত্যং জ্ঞানমনস্তং ব্রহ্ম’ আমাদের মন্ত্র ; অন্তরে আমাদের আশার অন্ত নেই,– আমরা মানব না পরাভব, আমরা জানব না অবসাদ, আমরা করব না আত্মার অবমাননা, চলব দৃঢ়পদে অসংকুচিত চিত্তে— চলব সমস্ত সুখদুঃখের উপর দিয়ে, সমস্ত স্বার্থ এবং দৈন্য এবং জড়তাকে দলিত ক’রে— তোমার বিশ্বলোকে অনাহত তুরীতে জয়বাদ্য বাজতে থাকবে, চারিদিক থেকে আহবান আসতে থাকবে ‘এসো, এসো, এসো’— আমাদের দৃষ্টির সম্মুখে খুলে যাবে চির জীবনের সিংহদ্বার— কল্যাণ, কল্যাণ, কল্যাণ— অস্তরে বাহিরে কল্যাণ— আনন্দম আনন্দম, পরিপুর্ণমানন্দম্।