পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

♥)ግ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী নেপথ্যে। থাক থাক থামো তুমি, আর গেয়ে না। নন্দিনী । সেই স্বরে সাগরকুলে বঁধন খুলে অতল রোদন উঠে দুলে সেই সুরে বাজে মনে অকারণে ভুলে-যাওয়া গানের বাণী, ভোলা দিনের কঁাদনহাসি। পাগলভাই, ওই-যে মরা ব্যাঙটা ফেলে রেখে দিয়ে কখন পালিয়েছে। গান শুনতে ও ভয় পায় । বিণ্ড। ওর বুকের মধ্যে যে বুড়ো ব্যাঙটা সকলকরম স্বরের ছোয়াচ বঁচিয়ে আছে, গান শুনলে তার মরতে ইচ্ছে করে । তাই ওর ভয় লাগে – পাগলী, আজ তোর মুখে একটা দীপ্তি দেখছি, মনের মধ্যে কোন ভাবনার অরুণোদয় হয়েছে আমাকে বলবি নে ? 暫 নন্দিনী । মনের মধ্যে খবর এসে পৌচেছে, আজ নিশ্চয় রঞ্জন আসবে। বিশু। নিশ্চয় খবর এল কোন দিক থেকে। নন্দিনী । তবে শোনো বলি। আমার জানলার সামনে ডালিমের ডালে রোজ নীলকণ্ঠপাখি এসে বসে। আমি সন্ধে হলেই ধ্রুবতারাকে প্রণাম করে বলি, ওর ডানার একটি পালক আমার ঘরে এসে যদি উড়ে পড়ে তো জানব, আমার রঞ্জন আসবে। আজ সকালে জেগে উঠেই দেখি উত্তরে-হাওয়ায় পালক আমার বিছানায় এসে পড়ে আছে। এই দেখে আমার বুকের আঁচলে । বিশু। তাই তো দেখছি, আর দেখছি কপালে আজ কুস্কুমের টিপ পরেছ। নন্দিনী । দেখা হলে এই পালক আমি তার চূড়োয় পরিয়ে দেব। বিশু। লোকে বলে নীলকণ্ঠের পাথায় জয়যাত্রার শুভচিহ্ন আছে । নন্দিনী । রঞ্জনের জয়যাত্রা আমার হৃদয়ের মধ্যে দিয়ে । বিশু। পাগলী, এখন আমি যাই আমার নিজের কাজে । নন্দিনী । না, আজ তোমাকে কাজ করতে দেব না। বিশু। কী করব বলে । নন্দিনী। গান করো।