পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা আমার ঘরের আশেপাশে যে-সব আমার বোবা-বন্ধু আলোর প্রেমে মত্ত হয়ে আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে আছে তাদের ডাক আমার মনের মধ্যে পৌছল। তাদের ভাষা হচ্ছে জীবজগতের আদিভাষা, তার ইশারা গিয়ে পৌছয় প্রাণের প্রথমতম স্তরে ; হাজার হাজার বৎসরের ভুলে-যাওয়া ইতিহাসকে নাড়া দেয় ; মনের মধ্যে যে-সাড়া ওঠে সেও ওই গাছের ভাষায়,– তার কোনো স্পষ্ট মানে নেই, অথচ তার মধ্যে বহু যুগযুগান্তর গুনগুনিয়ে ওঠে। * ওই গাছগুলো বিশ্ববাউলের একতারা, ওদের মজ্জায় মজ্জায় সরল স্বরের র্কাপন, ওদের ডালে ডালে পাতায় পাতায় একতালা ছন্দের নাচন। যদি নিস্তব্ধ হয়ে প্রাণ দিয়ে শুনি তাহলে অস্তরের মধ্যে মুক্তির বাণী এসে লাগে। মুক্তি সেই বিরাট প্রাণসমুদ্রের কূলে, যে-সমুদ্রের উপরের তলায় সুন্দরের লীলা রঙে রঙে তরঙ্গিত, আর গভীরতলে “শাস্তম্ শিবম অদ্বৈতম । সেই সুন্দরের লীলায় লালসা নেই, আবেশ নেই, জড়তা নেই, কেবল পরম শক্তির নিঃশেষ আনন্দের আন্দোলন । এতস্যৈবানন্দস্য মাত্রাণি দেখি ফুলে ফলে পল্লবে ; তাতেই মুক্তির স্বাদ পাই, বিশ্বব্যাপী প্রাণের সঙ্গে প্রাণের নির্মল অবাধ মিলনের বাণী শুনি । বোষ্টমী একদিন জিজ্ঞাসা করেছিল, কবে আমাদের মিলন হবে গাছতলায় । তার মানে গাছের মধ্যে প্রাণের বিশুদ্ধ সুর, সেই সুরটি যদি প্রাণ পেতে নিতে পারি তাহলে আমাদের মিলনসংগীতে বদ-সুর লাগে না । বুদ্ধদেব যে-বোধিক্রমের তলায় মুক্তিতত্ত্ব পেয়েছিলেন, র্তার বাণীর সঙ্গে সঙ্গে সেই বোধিক্রমের বাণীও শুনি যেন— তুই-এ মিশে আছে। আরণ্যক ঋষি শুনতে পেয়েছিলেন গাছের বাণী, বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেক: ; শুনেছিলেন, যদিদং কিঞ্চ সৰ্বং প্রাণ এজতি নিঃস্থতম্।