পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্তকরবী ৩৫৩ নন্দিনী । কতবার বলেছি, তোমাকে মনে করি আশ্চর্য । প্রকাণ্ড হাতে প্রচণ্ড জোর ফুলে ফুলে উঠেছে, ঝড়ের আগেকার মেঘের মতো— দেখে আমার মন নাচে ৷ নেপথ্যে। রঞ্জনকে দেখে তোমার মন-যে নাচে, সেও কি— নন্দিনী । সে কথা থাক্, তোমার তো সময় নেই। নেপথ্যে। আছে সময়, শুধু এই কথাটি বলে যাও। নন্দিনী । সে-নাচের তাল আলাদা, তুমি বুঝবে না। নেপথ্যে । বুঝব। বুঝতে চাই । নন্দিনী । সব কথা ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারি নে, আমি যাই। নেপথ্যে । যেয়ে না, বলে আমাকে তোমার ভালো লাগে কিনা। নন্দিনী । ই, ভালো লাগে । নেপথ্যে। রঞ্জনের মতোই ? নন্দিনী । ঘুরে-ফিরে একই কথা। এ-সব কথা তুমি বোঝ না । নেপথ্যে। কিছু কিছু বুঝি। আমি জানি রঞ্জনের সঙ্গে আমার তফাতটা কী । আমার মধ্যে কেবল জোরই আছে, রঞ্জনের মধ্যে আছে জাদু। নন্দিনী । জাদু বলছ কাকে । নেপথ্যে। বুঝিয়ে বলব ? পৃথিবীর নিচের তলায় পিণ্ড পিণ্ড পাথর লোহা সোনা, সেইখানে রয়েছে জোরের মুর্তি। উপরের তলায় একটুখানি কাচা মাটিতে ঘাস উঠছে, ফুল ফুটছে— সেইখানে রয়েছে জাদুর খেলা ৷ দুৰ্গমের থেকে হীরে আনি, মানিক আনি ; সহজের থেকে ওই প্রাণের জাদুটুকু কেড়ে আনতে পারি নে। নন্দিনী । তোমার এত আছে, তবু কেবলই অমন লোভীর মতো কথা বল কেন । নেপথ্যে। আমার যা আছে সব বোঝা হয়ে আছে। সোনাকে জমিয়ে তুলে তো পরশমণি হয় না,— শক্তি যতই বাড়াই যৌবনে পৌছল না। তাই পাহারা বসিয়ে তোমাকে বাধতে চাই ; রঞ্জনের মতো যৌবন থাকলে ছাড়া রেখেই তোমাকে বাধতে পারতুম। এমনি ক’রে বাধনের রশিতে গাট দিতে দিতেই সময় গেল। হায় রে, আরসব বাধা পড়ে, কেবল আনন্দ বাধা পড়ে না । নন্দিনী। তুমি তো নিজেকেই জালে বেঁধেছ, তার পরে কেন এমন ছটফট করছ বুঝতে পারি নে। নেপথ্যে। বুঝতে পারবে না। আমি প্রকাও মরুভূমি— তোমার মতো একটি