পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনবাণী পুণ্যগন্ধী প্রাণধারা ; সে ধারা চলেছে ধীরে ধীরে দিগন্তে তামল উমি উচ্ছ্বাসিয়া, দূর শতাব্দীরে শুনাতে মর্মর আশীর্বাণী । রাজার সাম্রাজ্য কতশত কালের বন্যায় ভাসে, ফেটে যায় ৰুদ্ৰৰুদের মতো, মানুষের ইতিবৃত্ত সুদুৰ্গম গৌরবের পথে কিছুদূর যায়, আর বারম্বার ভগ্নচুর্ণ রথে কীর্ণ করে ধূলি । তারি মাঝে উদার তোমার স্থিতি, ওগো মহা শাল, তুমি সুবিশাল কালের অতিথি ; আকাশেরে দাও সঙ্গ বর্ণরঙ্গে শাখার ভঙ্গিতে, বাতাসেরে দাও মৈত্রী পল্লবের মর্মরসংগীতে, মঞ্জুরির গন্ধের গও যে। যুগে যুগে কত কাল পথিক এসেছে তব ছায়াতলে, বসেছে রাখাল, শাখায় বেঁধেছে নীড় পাখি ; যায় তারা পথ বাহি আসন্ন বিস্মৃতি পানে, উদাসীন তুমি আছ চাহি। নিত্যের মালার সূত্রে অনিত্যের যত অক্ষগুটি অস্তত্বের আবর্তনে দ্রুতবেগে চলে তারা ছুটি ; মর্ত্যপ্রাণ তাহদের ক্ষণেক পরশ করে যেই পায় তারা জপনাম, তার পরে আর তারা নেই, নেমে যায় অসংখ্যের তলে । সেই চলে-যাওয়া দল রেখে দিয়ে গেছে যেন ক্ষণিকের কলকোলাহল দক্ষিণহাওয়ায় কাপা ওই তব পত্রের কল্লোলে, শাখার দোলায়। ওই ধ্বনি স্মরণে জাগায়ে তোলে কিশোর বন্ধুরে মোর । কতদিন এই পাতাঝরা বীথিকায়, পুষ্পগন্ধে বসন্তের আগমনী-ভর সায়াহ্নে দুজনে মোরা ছায়াতে অঙ্কিত চন্দ্রালোকে ফিরেছি গুঞ্জিত আলাপনে। তার সেই মুগ্ধ চোখে বিশ্ব দেখা দিয়েছিল নন্দনমন্দার রঙে রাঙা ; যৌবন-তুফান-লাগা সেদিনের কত নিদ্রাভাঙ জ্যোৎস্নামুগ্ধ রজনীর সৌহার্দ্যের সুধারসধারা তোমার ছায়ার মাঝে দেখা দিল, হয়ে গেল সারা । S OS