পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> >br রবীন্দ্র-রচনাবলী জগদীশচন্দ্র শ্ৰীযুক্ত জগদীশচন্দ্র বস্তু প্রিয়করকমলে বন্ধু যেদিন ধরণী ছিল ব্যথাহীন বাণীহীন মরু, প্রাণের আনন্দ নিয়ে, শঙ্কা নিয়ে, দুঃখ নিয়ে, তরু দেখা দিল দারুণ নির্জনে । কত যুগ-যুগাস্তরে কান পেতে ছিল স্তন্ধ মামুষের পদশবা তরে নিবিড় গহনতলে। যবে এল মানব অতিথি, দিল তারে ফুল ফল, বিস্তারিয়া দিল ছায়াবীথি । প্রাণের আদিমল্লাভাষা গুঢ় ছিল তাহার অস্তরে, সম্পূর্ণ হয় নি ব্যক্ত আন্দোলনে ইঙ্গিতে মর্মরে । তার দিনরজনীর জীবযাত্রা বিশ্বধরা তলে চলেছিল নানা পথে শব্দহীন নিত্যকোলাহলে সীমাহীন ভবিষ্যতে ; আলোকের আঘাতে তমুতে প্রতিদিন উঠিয়াছে চঞ্চলিত অণুতে অণুতে স্পন্দবেগে নিঃশব্দ ঝংকারগীতি ; নীরব স্তবনে সূর্যের বন্দনাগান গাহিয়াছে প্রভাতপবনে । প্রাণের প্রথমবাণী এইমতো জাগে চারিভিতে তৃণে তৃণে বনে বনে, তবু তাহ রয়েছে নিভৃতে,— কাছে থেকে শুনি নাই – হে তপস্বী, তুমি একমন। নিঃশব্দেরে বাক্য দিলে ; অরণ্যের অন্তরবেদন শুনেছ একাস্তে বসি ; মুক জীবনের যে-ক্ৰন্দন ধরণীর মাতৃবক্ষে নিরস্তর জাগাল স্পন্দন অস্কুরে অস্কুরে উঠি, প্রসারিয়া শত ব্যগ্র শাখা, পত্রে পত্রে চঞ্চলিয়া, শিকড়ে শিকড়ে আঁকাবঁকা জন্মমরণের দ্বন্দ্বে, তাহার রহস্ত তব কাছে বিচিত্র অক্ষরক্সপে সহসা প্রকাশ লভিয়াছে।