পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bペ রবীন্দ্র-রচনাবলী সেও সুন্দর। সে যদি চার অবস্থাতেই মারা যায়, তৰু তার কোথাও অসমাপ্তি ধরা পড়ে না। ঈশ্বরের কাজে কেবল যে অস্তেই সম্পূর্ণতা তা নয়, তার সোপানে সোপানেই সম্পূর্ণত। একদিন তো শিশু ছিলুম, সেদিনের কথা তো ভুলি নি। তখন জীবনের আয়োজন অতি যৎসামান্য ছিল। তখন শরীরের শক্তি, বুদ্ধি ও কল্পনা যেমন অল্প ছিল, তেমনি জীবনের ক্ষেত্র এবং উপকরণও নিতান্ত সংকীর্ণ ছিল । ঘরের মধ্যে ষে-অংশ অধিকার করেছিলুম তা ব্যাপক নয়, এবং ধুলার ঘর আর মাটির পুতুলই দিন কাটাবার পক্ষে যথেষ্ট ছিল । অথচ আমার সেই বাল্যের জীবন আমার সেই বালক আমির কাছে একেবারে পরিপূর্ণ ছিল । সে-যে কোনো অংশেই অসমাপ্ত, তা আমার মনেই হতে পারত না । তার আশাভরসা হাসিকান্না লাভক্ষতি নিজের বাল্যগণ্ডির মধ্যেই পর্যাপ্ত হয়ে ছিল । তখন যদি বড়োবয়সের কথা কল্পনা করতে যে তুম, তবে তাকে বৃহত্তর বাল্যজীবন বলেই মনে হত— অর্থাৎ রূপকথা খেলনা এবং লজঞ্জুসের পরিমাণকে বড়ো করে তোলা ছাড়া আর-কোনো বড়োকে স্বীকার করার কোনো প্রয়োজন বোধ করতুম व्मो । এ যেন ছবির তাসে ক খ শেখার মতো । কয়ে কাক, খয়ে খঞ্জন, গয়ে গাধা, ঘয়ে ঘোড়া। শুদ্ধমাত্র ক খ শেখার মতো অসম্পূর্ণ শেখা আর-কিছু হতেই পারে না। অক্ষরগুলোকে যোজনা করে যখন শব্দকে ও বাক্যকে পাওয়া যাবে, তখনি ক খ শেখার সার্থকতা হবে ; কিন্তু ইতিমধ্যে ক খ অক্ষর সেই কাকের ও খঞ্জনের ছবির মধ্যে সম্পূর্ণতা লাভ করে শিশুর পক্ষে আনন্দকর হয়ে উঠে— সে ক খ অক্ষরের দৈন্য অনুভব করতেই পারে না । তেমনি শিশুর জীবনে ঈশ্বর তার জগতের পুথিতে যে-সমস্ত রঙচঙ-করা কখয়ের ছবির পাতা খুলে রাখেন, তাই বারবার উলটে-পালটে তার আর দিনরাত্রির জ্ঞান থাকে না । কোনো অর্থ, কোনো ব্যাখ্যা, কোনো বিজ্ঞান, কোনো তত্ত্বজ্ঞান তার দরকারই হয় না— সে ছবি দেখেই খুশী হয়ে থাকে ; মনে করে, এই ছবি দেখাই জীবনের চরম সার্থকতা । তার পরে আঠারো বৎসর পেরিয়ে যেদিন উনিশে পা দিলুম, সেদিন খেলনা লজঞ্জস ও রূপকথা একেবারে তুচ্ছ হয়ে গেল। সেদিন যে-ভাবরাজ্যের সিংহদ্বারের সমুখে এসে দাড়ালুম, সে একেবারে সোনার আভায় ঝলমল করছে এবং ভিতর থেকে যে-একটি নহবতের আওয়াজ আসছে, তাতে প্রাণ উদাস করে দিচ্ছে। এতদিন ছিলুম বাইরে,