পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وازی) ft) ফলের উদ্দেশু সাধন করে। আমার নতুন মন গাছপালার মধ্যে ওই পুরাতন সহজ মন দেখে গভীর শাস্তি পায়, আনন্দিত হয়। শিশুর মধ্যেও সেই আদিম মনটি দেখতে তার এত ভালো লাগে । মেয়েদের প্রকৃতিতেও মনের এই আদিমতার প্রাধান্ত, তাদের সহজ বোধ সহজ প্রবৃত্তি বিচারবুদ্ধির চেয়ে অনেক প্রবল। আমরা অনেকদিন থেকে ওদের সরলা অবলা বলে আসছি, সে কথার মানেই ওই– যে-তর্কে দ্বিধা আনে ওদের স্বভাবে ভালো করে সেই তর্কবুদ্ধি দখল পায় নি। নতুন-বুদ্ধিওয়াল পুরুষের মনের কাছে এই সহজ মনের সংস্পৰ্শ আরামের । নতুনবুদ্ধিওয়াল মনটা ক্লাস্ত করে, বিভ্রান্ত করে, সংশয়ে আন্দোলিত করে ; এইজন্যে মানুষ অনেকসময় মদ খায়, এই উদগ্রবুদ্ধিমান মনটাকে বিহ্বল করে দিয়ে সেই আপন আদিম অবোধ মনের মধ্যে ছুটি নিতে চায় যেখানে অরাজকতা । শিশুর মধ্যে যাকে দেখছি, সেই আদিম মনটাকে আর-এক জায়গায় দেখছি যেখানে গণসংঘ। সেই গণেশের হাতির মুগু, তার যুথবুদ্ধির মাথা, সে বশ মানতেও যেমন মেতে উঠতেও তেমনি। তার প্রকাণ্ড শক্তির সঙ্গে তার নীরব বস্ততার মিল পাই নে, তেমনি তার অকস্মাৎ দুর্দামতারও হিসেব পাওয়া যায় না। সেই অবুঝ মনটার সংস্কারগুলো, তার সমস্ত অন্ধ প্রবর্তন গণসম্প্রদায়কে ঠেলে নিয়ে চলে। তারাই হল বাহন। নতুন মনটা সারথিগিরি করতে চেষ্টা করে, কিন্তু ঘোড়া প্রায়ই চার পা তুলে ছোটে। নইলে যুরোপে সেদিন যে যুদ্ধকাণ্ড হয়ে গেল, তা হতে পারত না । আদিম মনটা যখন বুদ্ধিওয়াল মনটাকে একেবারেই মানতে চায় না, তখন মানুষ যাকে সভ্যতা বলে তার ঘটে দুর্গতি। প্রাচীন গ্রীস তার অসামান্য বুদ্ধি সত্ত্বেও যদি মরে থাকে, তার কারণটা ছিল অবচেতন মনের মধ্যে, যেখানে তার গুহাচর প্রবৃত্তির, তার গর্তবাসী সংস্কারের বাসা । আজকের দিনে যুরোপ কোনোমতেই স্থায়ী শাস্তির কোনো ব্যবস্থা করতে পারছে না, তার কারণ সংস্কারগুলো লাগাম দাতে চেপে ধ’রে ছুটতে চায়। সভ্যতা এর উলটো কারণেও মরে । নতুন মন যখন সনাতন সহজ মনের শক্তিকে আপন জটিল কর্মজলে সম্পূর্ণ চাপা দিতে চায়, আপন রথের চাকার তলায় তাকে খণ্ড খণ্ড করে, তখন তার শক্তির আদিম আশ্রয় জীর্ণ হয়ে যায়। আকাশগামী চুড়াটা ধুলোর আশ্রয় ছাড়িয়ে উঠতে চায় ; ক্ষতি নেই, কিন্তু যখন সামঞ্জস্যের সীমা অতিক্রম করে তখনি ফিরে তাকে সেই ধুলোয় এসে পড়তে হয়। আদিম অবুঝ মনের সঙ্গে নতুনৰুদ্ধিমান মনের পদে পদে রফা-নিম্পত্তি করে চলাই পাকাচালে চলা । এই তো গেল আমার চিস্তার কথা। কিন্তু শিশুর মুখের দিকে যখন তাকিয়ে দেখতুম তখন যে-আনন্দ বোধ করতুম সেটা চিন্তার আনন্দ নয় ; তখন আমি বিশ্বব্যাপী আদিম