পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8brbr রবীন্দ্র-রচনাবলী এমন করে যদি তাকে না পেতুম তবে তাকে খুজতে যে তুম কোন রাস্তায় ? সে রাস্তার অস্ত পেতুম কবে এবং কোনখানে ? যত দূরেই যেতুম তিনি দূরেই থেকে যেতেন। কেবল তাকে অনির্বচনীয় বলতুম, অগম্য অপার বলতুম | কিন্তু সেই অনির্বচনীয় অগম্য অপার তিনিই আমার পিতা, আমার মাতা, তিনিই আমার— মানুষকে এই একটি অদ্ভুত কথা তিনি বলিয়েছেন। অনধিগম্য, এক মুহূর্তে এত আশ্চর্য সহজ হয়েছেন। - একেবারে আমাদের মানবজন্মের প্রথম মুহূর্তেই। মার কোলে মানুষের জন্ম, এইটেই মানুষের মস্ত কথা এবং প্রথম কথা । জীবনের প্রথম মুহূর্তেই তার অধিকারের আর অন্ত নেই ; তার জন্যে প্রাণ দিতে পারে এতবড়ো স্নেহ তার জন্যে অপেক্ষা করে আছে, জগতে এত তার মুল্য। এ মূল্য তাকে উপার্জন করতে হয় নি, এ মুল্য সে একেবারেই পেয়েছে। মাতাই শিশুকে জানিয়ে দিলে, বিশাল বিশ্বজগৎ তার আত্মীয়, নইলে মাতা তার আপন হত না । মাতাই তাকে জানিয়ে দিলে, নিখিলের ভিতর দিয়ে যে যোগের স্বত্র তাকে বেঁধেছে, সেটি কেবল প্রাকৃতিক কার্যকারণের স্বত্র নয়, সে একটি আত্মীয়তার স্বত্র। সেই চিরন্তন আত্মীয়তা পিতামাতার মধ্যে রূপগ্রহণ ক’রে জীবনের আরম্ভেই শিশুকে এই জগতে প্রথম অভ্যর্থনা করে নিলে। একেবারেই যে অপরিচিত, এক নিমেষেই তাকে সুপরিচিত বলে গ্রহণ করলে— সে কে। এমনটা পারে কে। এ শক্তি আছে কার । সেই অনন্ত প্রেম, যিনি সকলকেই চেনেন, এবং সকলকেই চিনিয়ে দেন । এইজন্যে প্রেম যখন চিনিয়ে দেন, তখন জানাশুনা চেনাপরিচয়ের দীর্ঘ ভূমিকার কোনো দরকার হয় না, তখন রূপগুণ শক্তিসামর্থ্যের আসবাব-আয়োজনও বাহুল্য হয়ে ওঠে, তখন জ্ঞানের মতো খুটিয়ে খুটিয়ে ওজন করে হিসেব করে চিনতে হয় না। চিরকাল তার যে চেনাই রয়েছে সেইজন্যে র্তার আলো যেখানে পড়ে সেখানে কেউ কাউকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে না । শিশু মা-বাপের কোলেই জগৎকে যখন প্রথম দেখলে, তখন কেউ তাকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে না— বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের থেকে একটি ধ্বনি এল, ‘এসো, এসো।’ সেই ধ্বনি মা-বাপের কণ্ঠের ভিতর দিয়ে এল কিন্তু সে কি মা-বাপেরই কথা । সেটি র্যার কথা তাকেই মানুষ বলেছে ‘পিতা নোহসি । শিশু জন্মাল আনন্দের মধ্যে, কেবল কার্যকারণের মধ্যে নয়। তাকে নিয়ে মাবাপের খুশি, মা-বাপকে নিয়ে তার খুশি । এই আনন্দের ভিতর দিয়ে জগতের সঙ্গে