পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OV8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বিশু। যতদিন চরের উচ্চপদে ভরতি ছিলুম, সর্দারনীদের কোঠাবাড়িতে তার তাসখেলার ডাক পড়ত। যখন ফাগুলালদের দলে যোগ দিলুম, ওপাড়ায় তার নেমস্তন্ন বন্ধ হয়ে গেল। সেই ধিক্কারে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে । চন্দ্রা। ছি, এমন পাপও করে । , বিশু। এ পাপের শাস্তিতে আর-জন্মে সে সর্দারনী হয়ে জন্মাবে। চন্দ্রা । বিশুবেয়াই, দেখো দেখো, ওই কারা ধুম করে চলেছে। সারে সারে ময়ূরপন্থি, হাতির হাওদায় ঝালর দেখেছ। ঝলমল করছে। কী চমৎকার ঘোড়সওয়ার। বর্শার ডগায় যেন এক-এক টুকরো স্বর্ষের আলো বিধে নিয়ে চলেছে। বিশু। ওই তো সর্দারনীরা ধ্বজাপুজার ভোজে যাত্রা করেছে। চন্দ্র। আহা, কী সাজের ধুম। কী চেহারা। আচ্ছা বেয়াই, যদি কাজ ছেড়ে না দিতে, তুমিও ওদের দলে অমনি ধুম করে বেরতে ? আর তোমার সেই স্ত্রী— বিশু। হা, আমাদেরো ওই দশা ঘটত। চন্দ্র। এখন আর ফেরবার পথ নেই? একেবারে না ? বিশু। আছে, নর্দমার ভিতর দিয়ে । নেপথ্যে। পাগলভাই ! বিশু। কী পাগলী । ফাগুলাল। ওই তোমার নন্দিনীর ডাক পড়ল। আজকের মতো বিশুদাদাকে আর পাওয়া যাবে না । চন্দ্রা । তোমার বিশুদাদার আশা আর রেখো না। কোন সুখে ও তোমাকে ভুলিয়েছে বলে দেখি, বেয়াই । J. বিশু। ভুলিয়েছে দুঃখে । চন্দ্রা। বেয়াই অমন উলটিয়ে কথা কও কেন । বিশু। তোরা বুঝবি নে। এমন দুঃখ আছে যাকে ভোলার মতো দুঃখ আর নেই। ফাগুলাল। বিশুদাদা, পস্ট করে কথা বলো, নইলে রাগ ধরে । বিশু। বলছি শোন, কাছের পাওনাকে নিয়ে বাসনার যে-দুঃখ তাই পশুর, দূরের পাওনাকে নিয়ে আকাঙ্ক্ষার যে-দুঃখ তাই মানুষের। আমার সেই চিরদুঃখের দূরের আলোটি নন্দিনীর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। চন্দ্র। এ-সব কথা বুঝি নে বেয়াই, একটা কথা ৰুঝি যে, যে-মেয়েকে তোমরা যত কম বোঝ সেই তোমাদের তত বেশী টানে। আমরা সাদাসিধে, আমাদের দর