পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন 8や> জন্তু যেমন চার পায়ে চলে ব’লে হাতের ব্যবহার পায় না, তেমনি বিষয়ীলোক সংসারে চার পায়ে চলে ব’লে কেবল চলে মাত্র, সে ভালো করে কিছুই দিতে পারে না এবং নিতে পারে না। কিন্তু ধারা সাধনার জোরে ব্রহ্মের দিকে মাথা তুলে চলতে শিখেছেন, তাদের হাত পা উভয়ই মাটিতে বদ্ধ নয়— তাদের দুই হাত মুক্ত হয়েছে— র্তাদের নেবার শক্তি এবং দেবার শক্তি পুর্ণতালাভ করেছে— তারা কেবলমাত্র চলেন তা নয়, তারা কর্তা, তারা স্বষ্টিকর্তা । যে স্থষ্টিকর্তা সে আপনাকে সর্জন করে ; আপনাকে ত্যাগ করেই সে স্বষ্টি করে । এই ত্যাগের শক্তিই হচ্ছে সকলের চেয়ে বড়ো শক্তি। এই ত্যাগের শক্তির দ্বারাই মানুষ বড়ো হয়ে উঠেছে। যে-পরিমাণেই সে আপনাকে ত্যাগ করতে পেরেছে সেই পরিমাণেই সে লাভ করেছে। এই ত্যাগের শক্তিই স্বষ্টিশক্তি। এই স্বষ্টিশক্তিই ঈশ্বরের ঐশ্বর্য। তিনি বন্ধনহীন বলেই আনন্দে আপনাকে নিত্যকাল ত্যাগ করেন । এই ত্যাগই র্তার স্বষ্টি । আমাদের চিত্ত যে-পরিমাণে স্বার্থবর্জিত হয়ে মুক্ত আনন্দে র্তার সঙ্গে যোগ দেয়, সেই পরিমাণে সেও স্বষ্টি করে, সেই পরিমাণেই তার চিন্তা, তার কর্ম স্বষ্টি হয়ে ওঠে । ধারা সংসার থেকে উচ্চ হয়ে উঠে ব্রহ্মের মধ্যে মাথা তুলে সঞ্চরণ করতে শিখেছেন, র্তাদের এই ত্যাগের শক্তিই মুক্তিলাভ করেছে। এই আসক্তিবন্ধনহীন আত্মত্যাগের অব্যাহত শক্তি দ্বারাই আধ্যাত্মিকলোকে তারা শ্রেষ্ঠ অধিকার লাভ করেন । এই অধিকারের জোরে সর্বত্রই তারা রাজা । এই অধিকারই মানুষের পরম অধিকার । এই অধিকারের মধ্যেই মানুষের চরম স্থিতি । এইখানে মানুষকে ‘পারি নে? বললে চলবে না – চিরজীবন সাধনা করেও এই চরম গতি তাকে লাভ করতে হবে, নইলে সে যদি সমস্ত পৃথিবীরও সম্রাট হয় তবু তার মহতী বিনষ্টি । যে ব্রহ্মের শক্তি আমার অস্তরে বাহিরে সর্বত্রই নিজেকে উৎসর্জন করছে, যিনি ‘আত্মদা’, আমি জলে-স্থলে-আকাশে সুখে-দুঃখে সর্বত্র সকল অবস্থায় তার মধ্যেই আছি, এই চেতনাকে প্রতিদিনের চেষ্টায় সহজ করে তুলতে হবে। এই সাধনার ধ্যানই হচ্ছে গায়ত্রী। এই সাধনাই হচ্ছে র্তার মধ্যে দাড়াতে এবং চলতে শেখা। অনেকবার টলতে হবে, বারবার পড়তে হবে, কিন্তু তাই বলে ভয় করলে হবে না তবে বুঝি পারব না’। পারবই, নিশ্চয়ই পারব। কেননা অস্তরের মধ্যে এই দিকেই মানুষের একটা প্রেরণা আছে,– এইজন্যে মানুষ দুঃসাধ্যতাকে ভয় করে না, তাকে বরণ করে নেয়,– এইজন্যেই মানুষ এতবড়ো একটা আশ্চর্য কথা বলে জগতের অন্য-সকল প্রাণীর চেয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে, ভূমৈব সুখং, নামে মুখমস্তি। > tijo e