পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্তকরবী \פט\ס নন্দিনী । ওই দেখো পাগলভাই, ওই ছায় । নিশ্চয় সর্দার আমাদের কথা লুকিয়ে শুনেছে। বিশু। এখানে তো চারদিকেই সর্দারের ছায়া, এড়িয়ে চলবার জো কী – সর্দারকে কেমন লাগে ? নন্দিনী । ওর মতো মরা জিনিস দেখিনি। যেন বেতবন থেকে কেটে আনা বেত। পাতা নেই, শিকড় নেই, মজ্জায় রস নেই, শুকিয়ে লিকলিক করছে। বিশু। প্রাণকে শাসন করবার জন্যেই প্রাণ দিয়েছে দুর্ভাগা। নন্দিনী । চুপ করে, শুনতে পাবে। বিশু। চুপ করাটাকেও যে শুনতে পায়, তাতে আপদ আরো বাড়ে। যখন খোদাইকরদের সঙ্গে থাকি, তখন কথায়বার্তায় সর্দারকে সামলে চলি । তাই ওরা আমাকে অপদাৰ্থ বলে অশ্রদ্ধা করেই বঁচিয়ে রেখেছে। ওদের দণ্ডট দিয়েও আমাকে ছোয় না। কিন্তু পাগলী, তোর সামনে মনটা স্পর্ধিত হয়ে ওঠে, সাবধান হতে ঘৃণা বোধ হয় । নন্দিনী । না না, বিপদকে তুমি ডেকে এনে না। ওই-ষে সর্দার এসে পড়েছে । সর্দারের প্রবেশ সর্দার। কিগে৷ ৬৯ জ্ঞ, সকলেরই সঙ্গে তোমার প্রণয়, বাছবিচার নেই ? বিশু। এমন কি, তোমার সঙ্গেও শুরু হয়েছিল, বাছবিচার করতে গিয়েই বেধে গেল । সর্দার। কী নিয়ে আলাপ চলছে। বিশু। তোমাদের দুর্গ থেকে কী করে বেরিয়ে আসা যায় পরামর্শ করছি। সর্দার। বল-কি, এত সাহস ? কবুল করতেও ভয় নেই ? বিশু। সর্দার, মনে-মনে তো সব জানই । খাচার পাখি শলাগুলোকে ঠোকরায়, সে তো আদর করে নয়। এ কথা কবুল করলেই কী, না-করলেই কী। সর্দার। আদর করে না, সে জানা আছে ; কিন্তু কবুল করতে ভয় করে না, সেটা এই কয়েক দিন থেকে জানান দিচ্ছে। নন্দিনী । সর্দারজি, তুমি-যে বলেছিলে, আজ রঞ্জনকে এনে দেবে। কই কথা রাখলে না ? সর্দার। আজই তাকে দেখতে পাবে।