পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
১৭৬
দ্বিতীয় রত্নমাণিক্য

প্রচার করিয়া সিংহাসনে বসিলেন। রত্নের দিন বন্দীশালায় কাটিতে লাগিল। মহেন্দ্রমাণিক্যের শাসনে রত্নের প্রাণসংহারের ব্যবস্থা হইল, অত্যল্পকাল মধ্যেই রত্নমাণিক্যের প্রাণহীন দেহ ভূমিতে লুটাইল। স্বামীর চিতায় রাণী রত্নবতী সহমৃতা হইলেন।

 রত্নমাণিক্যের রাজত্বকাল সুদীর্ঘ ত্রিশ বৎসরের অধিক, তিনি আওরঙ্গজেবের রাজত্বের মধ্যভাগে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হইয়া উক্ত মোগল সম্রাটের পরেও কয় বৎসর রাজত্ব করেন। তাঁহার শাসনকাল যেন মেরুদণ্ডবিহীন এক মানুষের জীবনকাহিনী। রাজ্যলোভী কুমারেরা পুণ্যকীর্ত্তি পূর্ব্বপুরুষের স্বদেশপ্রেম বিস্মৃত হইয়া, বিশাল ত্রিপুরা রাজ্যকে সম্রাটের হাতে সঁপিয়া দিতে কিছুমাত্র কুণ্ঠিত হন নাই। এত চক্রান্ত-জালের মধ্যেও ত্রিপুরার স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয় নাই।” মেজর ষ্টুয়ার্ট স্বপ্রণীত বাঙ্গলার ইতিহাসে লিখিয়াছেন যে যদিচ ইতঃপূর্ব্বে মুসলমানদিগের বাহুবলে ত্রিপুরা লুণ্ঠিত ও বিজিত হইয়াছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহার স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয় নাই। ত্রিপুরেশ্বর স্বাধীন ছত্র ধারণ পূর্ব্বক স্বনামাঙ্কিত মুদ্রা প্রচার করিতেছিলেন। ১৭০৭-০৮ খৃষ্টাব্দে ত্রিপুরেশ্বর, নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর প্রবল বিক্রম কাহিনী শ্রবণে তাঁহাকে গজ ও গজদন্ত প্রভৃতি উপঢৌকন প্রদান করেন। তদ্বিনিময়ে নবাব ত্রিপুরেশ্বরকে “খেলাত” প্রদান করিয়াছিলেন।”[১]

  1. Stewart’s History of Bengal, p. 233. কৈলাস সিংহ প্রণীত রাজমালা, পৃঃ ৯৯।