পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পীড়ার অবস্থা।
৫৯৯

ধৈর্যয়চ্যুতি হয় নাই। অন্তরের যাতনানুভূতি তিনি বাহিরের লোককে বাহ্যাকারে বুঝিতে দিতেন না। যতক্ষণ না চৈতন্যলোপ হইয়াছিল, ততক্ষণ তিনি কাহাকেও সহজে মল, মূত্র বা বমনাদি পরিস্কার করিতে দিতেন না। সে পক্ষে কেহ উদ্যোগী হইলে স্বয়ং বিরক্ত হইতেন। কাহারও কোন কষ্ট দেখিলে তাঁহার প্রাণ কঁদিয়া উঠিত; কিন্তু নিজের অসহ্য কষ্টতাপেও তিনি কখন কাতর হইতেন না। তিনি নিরশ্রু ভীম হিমগিরিবৎ অচল অটল থাকিতেন। একবার তিনি আপনার কনিষ্ঠ কন্যার পুত্রকে সঙ্গে করিয়া কোন পুস্তকালয়ে গিয়াছিলেন। সেখানে তাঁহার পায়ের উপর একটা ভয়ানক ভারী লৌহ-চাপ পড়িয়া যায়। অপর কেহ হইলে হয়ত উঠিতে পারিত না। তিনি কিন্তু অম্লানবদনে উঠিয়া পাল্কী চাপিয়া বাড়ী আসেন। যাতনা যৎপরোনাপ্তি হইয়াছিল। কিন্তু সে যাতনায় বাহ্যাবয়বে বিকৃতির লেশমাত্র হয় নাই। দৌহিত্র যতীশচন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন,—“যাতনা হইতেছে কি?” তিনি ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন,—“যাতনা যা হইতেছে, তোদের হইলে ডাক্তারের ডাক বসাইতে হইত; আমাকেও পাগল করিতিস্।” আর একবার বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পায়ে কারবঙ্কল হইয়াছিল। তিনি সদানন্দ সাহস্য-বদনে বসিয়া প্যারীচরণ সরকারের সহিত কথা কহিতেছিলেন। সেই সময় ডাক্তার আসিয়া তাঁহার “কারবঙ্কল” কাটিয়া দেন। “কারবঙ্কল” কাটিবার সময় তাঁহার একটু মাত্র মুখবিকৃতি দেখা যায় নাই। প্যারী বাবু অবাক্ হইয়াছিলেন। এমন সহিষ্ণুতার পরিচয় সহস্র প্রকারে পাইবে। বার্দ্ধক্যেও কণ্টকময় অন্তিম শয্যায় সে সহিষ্ণুতার সর্ব্বোচ্চ পরিচয়। যাতনার অগ্নিকুণ্ড হইতে যথাপাত্রে যথাযোগ্য রহস্যভাসের সুধা ধারা বর্ষিত হইত।