পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সর্ব্বতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মি নমোহস্তু তে।

 মাদ্রী বলে হেন বাক্য না বল আমারে।
 পলেক না জীব আমি না দেখি রাজারে।।
 তোমার বিলম্বে এতক্ষণ আছি প্রাণে।
 এখনি শরীর ত্যাজি যাব প্রভুস্থানে।।
 আমার যৌবনে প্রভু তৃপ্ত নাহি হয়।
 আমা সনে রমণে যাঁহার হৈল ক্ষয়।।
 তাঁহার সংহতি আমি ছাড়িব কেমনে।
 পাণ্ডু স্বামী সনে দেহ রাখিব এক্ষণে।।
 তোমার নিকটে করি এক নিবেদন।
 বিদায় তোমার স্থানে মাগি যে এখন।।
   পুনঃ তোমারে করি যে পরিহার।
 যতনে পালিবা এই দুইটি কুমার।।
 ইহা বিনা তোমারে কহিতে নাহি কিছু।
 পিতৃ মাতৃ বিনা পুত্র সহজে অনাথ।।
 তুমি সর্ব্ব বন্ধু যেন তুমি মাত তাত।।
 এতেক বলিয়া মাদ্রী নিঃশব্দ হইল।
 বিদায় করিয়া শবে আলিঙ্গন দিল।।
 আলিঙ্গন করি মাদ্রী ত্যাজিল পরাণ।
 মুনি শতশৃঙ্গবাসী আইল সেই স্থান।।
 ঋষিগণ মিলিয়া করিল এ বিচার।
 পুত্রসহ ছিল পাণ্ডু আশ্রমে আমার।।
 যখন শরীর ত্যাগ করিল রাজন।
 অনাথ হইল কুন্তী শিশু পুত্রগণ।।
 রাজপুত্রগণ স্থিতি না শোভে কাননে।
   শেতে লইয়া রাখ পাণ্ডুপুত্র গণে।।
 দ্বৈত শব স্কন্ধে করি লহ চরগণ।
 পুত্রসহ কুন্তী লৈয়া, করহ গমন।।
   দিনে গেল কুন্তী হস্তিনানগরে।
 প্রবেশ করিল সবে নগর ভিতরে।।
 রাজ-অন্তপুরেতে-হইল সমাচার।
 কুন্তী সহ আইল পঞ্চ পাণ্ডুর কুমার।।
 ভীষ্ম সোমদত্ত আর বাহ্লীক বিদুর।
 ধৃতরাষ্ট্র আদি যত বৈসে অন্তঃপুর।।
 সত্যবতীসহ বধূ গান্ধারী সুন্দরী।
  হেতে বৈসেন আর যত বৃদ্ধ নারী।।
 ঋষিগণে প্রণমিয়া দিলেন আসন।
 কহিতে লাগিল বার্ত্তা সব ঋষিগণ।।
 শতশৃঙ্গ পর্ব্বতে ছিলেন পাণ্ডুরাজ।
 ব্রম্ভচর্য্য করিতেন মুনির সমাজ।।
 দেববরে পঞ্চপুত্র হইল তাঁহার।
 কালেতে তাঁহারে কালে করিল সংহার।
 মদ্রকন্যা অতি ধন্যা ভুবনে মানিতা।
 হইলেন অনুমৃতা পাণ্ডুর বনিতা।।
 এই কুন্তী সহ দেবসুত পঞ্চজন।
 এই পাণ্ডু মাদ্রী দোহে রহিত জীবন।।
 যেমন বিচার হয় করহ বিধান।
 এত বলি মুনিগণ করিল প্রয়াণ।।
 এত শুনি রোদন করিল সর্ব্বজন।
 হাহাকার শব্দ মুখে করুণ ক্রন্দন।।
 সত্যবতী আই কান্দে কৌশল্যা জননী।
 শ্রীভীষ্ম বিদুর কান্দে অন্ধ নৃপমণি।।
 নগরের লোক করে বিলাপ ক্রন্দন।
 বাল-বৃদ্ধ তরুণী কান্দয়ে সর্ব্বজন।।
 তবে ধৃতরাষ্ট্র বলে বিদুরে ডাকিয়া।
 দুই শব দগ্ধ কর গঙ্গাতীরে লৈয়া।।
 হেন রাজবিধান আছয়ে পূর্ব্বাপর।
 শুনিয়া বিদুর তবে হইল সত্বর।।
 দুই শব কান্দে করি ল'য়ে ক্ষত্রগণে।
 চতুর্দ্দোল বিভূষিত বিবিধ বিধানে।।
 উপরে ধরিল ছত্র যেন রাজনীত।
 শত শত চামর ঢুলায় চারিভিত।।
 অগুরু চন্দন কাষ্ঠ আনিল বিস্তর।
 কলসে কলসে ঘৃত আনে থরে থর।।
 পঞ্চভাই দিল পিণ্ড ক্ষত্রিয় বিধান।
 দ্বাদশ দিবসে করে অগ্নি শান্তি দান।।
 স্বর্ণদান ভমিদান করে গাভীদান।
 কাঞ্চন-রজত-দান বিবিধ বিধান।।
 মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
 কাশীরাম দাস কহে শুনে পূণ্যবান্।।
      ----