এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
সকলবিভবসিদ্ধ্যৈ পাতু বাগ্দেবতা নমঃ
কেহ বলে মহাবীর বীর বৃকোদর। কেহ বলে ভীম হৈতে বলী কুরুবর।। হেনমতে দুই পক্ষ হইল সভায়। উঠিল প্রলয় শব্দ কথায় কথায়।। ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী পাণ্ডবগণ-মাতা। তিনজনে বিদুর কহেন সব কথা।। বুঝিয়া লোকের কর্ম্ম দ্রোণ মহাশয়। আজ্ঞা করিলেন দোঁহে নিবৃত্ত যে হয়।। মধ্যে গিয়া দণ্ডাইল গুরুর নন্দন। নিবৃত্ত হইল দোঁহে ভীম দুর্য্যোধন।। আজ্ঞা করিলেন গুরু অর্জ্জুনে আসিতে। আইলেন ধনঞ্জয় ধনুঃশর হাতে।। নবজলধর প্রায় অঙ্গের বরণ। পূর্ণ-শশধর মুখ রাজীবলোচন।। দেখিয়া মোহিত হৈল যত সভাজন। কেহ বলে আইলেন কুন্তীর নন্দন।। কেহ বলে পাণ্ডুপুত্র পাণ্ডব মধ্যম। কেহ বলে কুরুশ্রেষ্ঠ রিপুগণ-যম।। বীর ধর্ম্মশীল সাধু সর্ব্বলোকে বলে। ইহা সম বীর্য্যবন্ত নাহিক ভুতলে।। এইমত কথাবার্ত্তা সকলে সভাতে। ধন্য ধন্য বলি শব্দ হৈল আচম্বিতে।। শব্দ শুনি ধৃতরাষ্ট্র ধর্ম্মে জিজ্ঞাসিল। কি হেতু এমন শব্দ সভাতে হইল।। বিদুর বলেন রাজা আইল অর্জ্জুন। সভাসদ সকলে প্রশংসে তার গুণ।। ধৃতরাষ্ট্র শুনি প্রশংসিলেন অপার। কুরুবংশ ভাগ্য মম এতেক কুমার।। ধন্য কুন্তী এই পুত্র গর্ভে জন্মাইল। যাহার মহিমা যশ সভাতে পুরিল।। কুন্তীদেবী শুনি আনন্দিত হৈল মন। স্তনযুগে ঝরে দুগ্ধ সজল-নয়ন।। তবে পার্থ মহাবীর সভামধ্যে গিয়া। সভাতে পূরেণ শব্দ ধনু টঙ্কারিয়া।। মারিল অনল অস্ত্র হইল অনল। অগ্নি প্রবেশিল গিয়া গগনমণ্ডল।। দেখিয়া সকল লোক মানিল বিস্ময়। চতুর্দ্দিকে দেখে সব হৈল অগ্নিময়।। যুড়িল বরুণ বাণ কুন্তীর নন্দন। বারিলেন অগ্নিবৃষ্টি বরিষে জীবন।। বায়ু অস্ত্রে করিলেন জল নিবারণ। আকাশ অস্ত্রেতে বায়ু করেন বারণ।। সাধিয়া পর্ব্বত অস্ত্রে করেন গিরিবর। পর্ব্বত করেন চূর্ণ মারি বজ্রশর।। ভূমি অস্ত্রে নির্ম্মান করেন ভূমণ্ডল। সিন্ধু অস্ত্রে জল পূর্ণ করিল সকল।। অন্তর্ধান অস্ত্র মারি হইলেন লুকি। কোথায় আছেন পার্থ কেহ নাহি দেখি।। কভূ রথে ধনঞ্জয় কভূ ভূমিপরে। বাদিয়ার বাদি যেন ফেরেন সত্বরে।। নানা বিদ্যা প্রকাশ করেন ধনঞ্জয়। ধন্য ধন্য করি শব্দ হৈল সভাময়।। নিবৃর্ত্তিয়া সর্ব্ব বিদ্যা ইন্দ্রের নন্দন। বাহুষ্ফোটে করিলেন বজ্রের নিঃস্বন।। সেই শব্দে সবার কর্ণেতে লাগে তালি। গুরু অগ্রে রহিলেন করি কৃতাঞ্জলি।। মহাভারতের কথা অমৃত-অর্ণবে। পাঁচালি প্রবন্ধে কহে কাশীরাম দেবে।। ------ রঙ্গস্থলে কর্ণের আগমন। অর্জ্জুনের বিদ্যা যদি হৈল সমাধান। রঙ্গভূমি মধ্যে কর্ণ করে আগমন।। কাঞ্চন জিনিয়া তার অঙ্গের বরণ। শ্রবণ পরশে দিব্য পঙ্কজ-নয়ন।। শ্রবণে কুণ্ডলযুগ্ম দীপ্ত দিনকর। অভেদ্য কবচে আবরিত কলেবর।। দুই দিকে দুই তনু বাম হাতে ধনু। আজানুলম্বিত ভুজ অনিন্দিত তনু।। অবহেলে অবজ্ঞা করয়ে সর্ব্বজনে। বালকের ক্রীড়া হেন ভাবে লোক মনে।। কর্ণের বচন শুনি লোকে চমৎকার। কেহ বলে এই হবে দেবের কুমার।।