পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐঁ ঐঁ মন্ত্র প্রিয়াং নিত্যাং কুমাতধ্বংসকারিণীং।

 বশিষ্ঠ বলেন সত্য কহিলেন মুনি।
 পূর্ব্বে বলিয়াছি বাপু এ সব কাহিনী।।
 অকারণে হিংসাকর্ম্মে উপজয়ে পাপ।
 এ সব করিলে তুমি পাবে বড় তাপ।।
 এত শুনি পরাশর কৈল সমাধান।
 বহু যত্নে কৈল যজ্ঞ-অগ্নির নির্ব্বাণ।।
 নিবৃত্ত না হয় অগ্নি পূর্ব্ব অঙ্গীকারে।
 সঙ্কল্প করিল যত রাক্ষস সংহারে।।
 আহুতি না পেয়ে অগ্নি প্রবেশিল বনে।
 অদ্যপি অনল উঠে কানন দহনে।।
 গন্ধর্ব্ব বলিল শুন পাণ্ডুর নন্দন।
 কহিলাম এ সকল কথা পুরাতন।।
 বশিষ্ঠের ক্ষমা সম নাহিক সংসারে।
 বিশ্বামিত্র সংহারিল শতেক কুমারে।।
 তথাপিও তাঁরে ক্রোধ না করিল মুনি।
 যম হৈতে লৈতে পারে তথাপি না জানি।।
 কারণ বুঝিয়া মুনি অতি ক্ষমাবান্।
 নৃপতি কল্মাষপাদে দিল পুত্ত্রদান।।
 যে রাজা হইল হেতু শতপুত্ত্রনাশে।
 তারে পুত্রবান কৈল আপন ঔরসে।।
 অর্জ্জুন বলেন খ ইহার কারণ।
 কি কারণে হেন কর্ম্ম কৈল তপোধন।।
 একে ত পরের দারা, দ্বিতীয়ে অগম্য।
 কি কারণে বশিষ্ঠ করিল হেন কর্ম্ম।।
 গন্ধর্ব্ব বলিল শুন তার বিবরণ।
 শক্তি-শাপে নিশাচর হইল রাজন্।।
 হেনকালে পথে দেখে ব্রাম্ভণী ব্রাম্ভণ।
 রাজারে দেখিয়া পলাইল দুইজন।।
 দেখিয়া ব্রাম্ভণে গিয়া ধরিল নৃপতি।
 ভয়েতে বিলাপ করে ব্রাম্ভণ-যুবতী।।
 কাতর হইয়া বলে বিনয়-বচন।
 পৃথিবীর রাজা তুমি সৌদাস-নন্দন।।
 তোমার বংশেতে সবে দ্বিজের কিঙ্কর।
 ব্রাম্ভণেরে বধ না করিও নরবর।।
 আজি মম প্রথম হৈয়াছে ঋতুস্নান।
 প্রথম দিবসে নাহি যাই স্বামিস্থান।।
 অতিশয় ক্ষুধার্ত্ত হৈয়াছ যদি তুমি।
 আমারে ভক্ষণ কর ছাড় মম স্বামী।।
 এতেক কাতর বাণী ব্রাম্ভণী বলিল।
 সহজে অজ্ঞান রাজা শুনে না শুনিল।।
 ব্যাঘ্রে যেন পশু ধরি করয়ে ভক্ষণ।
 ঘাড় ভাঙ্গি রক্তপান কৈল ততক্ষণ।।
 ব্রাম্ভণের মৃত্যু দেখি ব্রাম্ভণী বিকল।
 আনিয়া বনের কাষ্ঠ জ্বালিল অনল।।
 অগ্নি প্রদক্ষিণ করি ডাকি বলে ভূপে।
 ওরে দুষ্ট দুরাচার শুন মম শাপে।।
 মম ঋতু ভুঞ্জিতে না পাইলেন স্বামী।
 এই মত নিরাশ হইবে দুষ্ট তুমি।।
 স্ত্রী স্পর্শ করিলে তোর অবশ্য মরণ।
 এ শাপ দিলাম তোরে নহিবে খণ্ডন।।
 সূর্য্যবংশ-কারণ জানাই উপদেশে।
 বংশরক্ষা হবে তোর ব্রাম্ভণ-ঔরসে।।
 এত বলি ব্রাম্ভণী পড়িল অগ্নিমাঝ।
 দ্বাদশ বৎসর বনে ফিরে মহারাজ।।
 বশিষ্ঠ হইতে মুক্ত হইয়া রাজন্।
 চেতন পাইয়া দেশে করিল গমন।।
 স্নান দান জপ হোম করিল ভূপতি।
 শয়ণ করিতে গেল যথা মদয়ন্তী।।
 মদয়ন্তী বলে রাজা নাহিক স্মরণ।
 ব্রাম্ভণী দিলেন শাপ দারুণ বচন।।
 স্ত্রী স্পর্শ করিলে তব হইবে মরণ।
 সে কারণে মম অঙ্গ না ছুঁয়ো রাজন্।।
 রাণীর বচনে নিবর্ত্তিল নরপতি।
 বংশরক্ষা-কারণে চিন্তিত মহামতি।।
 বশিষ্ঠ হইতে হবে শুনি লোকমুখে।
 ভার্য্যা নিয়োজিল কৈল বশিষ্ঠ মুনিকে।।
 বশিষ্ঠ হইতে তাঁর হইল সন্ততি।
 সূর্য্যবংশ রাখিল বশিষ্ঠ মহামতি।।
 এত শুনি অর্জ্জুন হইল হৃষ্টমন।
 গন্ধর্ব্বেরে বলিলেন বিনয়-বচন।।
 এসব শুনিয়া মম ব্যগ্র হৈল মন।
 পুরোহিত-যোগ্য কোথা পাইব ব্রাম্ভণ।।