পাতা:কাদম্বরী.djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০২
কাদম্বরী।

কহিলেন, তবে বৈশম্পায়ন কোথায় আছেন, কি নিমিত্ত আসিলেন না? তাহারা কহিল, রাজকুমার! শ্রবণ করুন।

আপনি বৈশম্পায়নকে স্কন্ধাবার লইয়া আসিবার ভার দিয়া প্রস্থান করিলে তিনি কহিলেন, পুরাণে শুনিয়াছি অচ্ছোদসরোবর অতি পবিত্র তীর্থ। অশেষ ক্লেশ স্বীকার করিয়াও লোকে তীর্থ দর্শন করিতে যায়। আমরা সেই তীর্থের নিকটে আসিয়াছি, অতএব একবার না দেখিয়া এখান হইতে যাওয়া উচিত নয়। অচ্ছোদসরোবরে স্নান করিয়া এবং তত্তীরস্থিত ভগবান্ শশাঙ্কশেখরকে প্রণাম ও প্রদক্ষিণ করিয়া যাত্রা করা যাইবে। এই বলিয়া সেই সরোবর দেখিতে গেলেন। তথায় বিকসিতকুসুম, নির্ম্মল জল, রমণীয় তীরভূমি, শ্রেণীবদ্ধ তরু, কুসুমিত লতাকুঞ্জ দেখিয়া বোধ হইল যেন, বসন্ত সপরিবারে ও সবান্ধবে তথায় বাস করিতেছেন। ফলতঃ তাদৃশ রমণীয় প্রদেশ ভূমণ্ডলে অতি বিরল। বৈশম্পায়ন তথায় ইতস্ততঃ দৃষ্টিপাত পূর্ব্বক এক মনোহর লতামণ্ডপ দেখিলেন। ঐ লতামণ্ডপের অভ্যন্তরে এক শিলা পতিত ছিল। পরমপ্রীতিপাত্র মিত্রকে বহু কালের পর দেখিলে অন্তঃকরণে যেরূপ ভাবোদয় হয়, লতামণ্ডপ দেখিয়া বৈশম্পায়নের মনে সেইরূপ অনির্ব্বচনীয় ভাবোদয় হইল। তিনি নিমেষশূন্য নয়নে সেই দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া রহিলেন। ক্রমে নিতান্ত উন্মনা হইতে লাগিলেন। পরিশেষে ভূতলে উপবিষ্ট হইয়া বামকরে বামগণ্ড সংস্থাপন পূর্ব্বক নানাপ্রকার চিন্তা করিতে লাগিলেন। তাঁহার আকার দেখিয়া বোধ হইল যেন, কোন বিস্মৃত বস্তুর স্মরণ করিতেছেন। তাঁহাকে সেইরূপ উন্মনা দেখিয়া আমরা মনে করিলাম, বুঝি রমণীয় লতামণ্ডপ ও মনোহর সরোবর ইঁহার চিত্তকে বিকৃত করিয়া থাকিবেক। যৌবনকাল কি বিষম কাল! এই কালে উত্তীর্ণ হইলে আর লজ্জা, ধৈর্য্য, কিছুই থাকে না। যাহা হউক, অধিক ক্ষণ এখানে আর থাকা হইবে না। শাস্ত্রকারেরা কহেন, বিকারের সামগ্রী শীঘ্র