পাতা:বড়দিদি-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বড়দিদি
৪৪


কাহার উপর নির্ভর করিতে হইবে, এটাই সে খুঁজিয়া পায় না। খুঁজিয়া পায় না বলিয়াই সেই যে নিজের কাজ নিজে দেখিতে পারে, তাহাও নহে, আজও পরের পানে চাহিয়া থাকে; কিন্তু পূর্ব্বের মত তেমন আর মনে ধরে না, সব কাজেই যেন একটু ত্রুটি দেখিতে পায়, একটু খুঁত খুঁত করে। তাহার বিমাতা দেখিয়া শুনিয়া কহেন, “সুরো আজকাল বদ্‌লে গেছে।”

 মধ্যে একদিন তাহার জ্বর হইয়াছিল। বড় কষ্ট হইয়াছিল; চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িল; বিমাতা কাছে বসিয়াছিলেন— তিনি একটা নূতন জিনিস দেখিলেন। মুহূর্ত্তের মধ্যে তাঁহারও চক্ষু ফাটিয়া জল বাহির হইল; আদর করিয়া তাহার চক্ষু মুছাইয়া কহিলেন, “সুরো কেন বাবা?” সুরেন চুপ করিয়া রহিল। তারপর, একখানা পোষ্টকার্ড চাহিয়া লইয়া আঁকাবাঁকা অক্ষরে লিখিয়া দিল— বড়দিদি, আমার জ্বর হইয়াছে, বড় কষ্ট হইতেছে।

 পত্রখানা ডাকঘরে পৌঁছিল না। প্রথমে শয্যা হইতে মেজের উপরে পড়িল, তাহার পর যে ঘর ঝাঁটাইতে আসিল, সে বেদানার খোসা, বিস্কুটের টুক্‌রা, আঙ্গুরের তুলা এবং সেই চিঠিখানি, সব একসঙ্গে ঝাঁটাইয়া বাহিরে ফেলিয়া দিল, সুরেন্দ্রনাথের প্রাণের আকাঙ্ক্ষা ধুলা মাখিয়া, হাওয়ায় উড়িয়া, শিশিরে ভিজিয়া, রোদ খাইয়া অবশেষে একটা বাব্‌লা-গাছের তলায় পড়িয়া রহিল।

 প্রথমে সে একখানি মূর্ত্তিমতী উত্তরের আশায় চাহিয়া রহিল, তাহার পর একখানি হস্তাক্ষর— কিন্তু, অনেকদিন কাটিয়া গেল, কিছুই আসিল না। ক্রমে তাহার জ্বর সারিয়া গেল— পথ্য করিয়া উঠিয়া বসিল।