পাতা:বড়দিদি-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬১
বড়দিদি


পশু!’ কিন্তু মাধবী ভুল করিয়াছিল– সকলেরই মন তাহার মত একুশ-বাইশ বছরে বৃদ্ধ হইয়া যায় না!

 ইহার তিন দিন পরে যখন জমিদারের পিয়াদা তাহার দ্বার-পথে আসন করিয়া বসিল এবং হাঁক-ডাক করিয়া গ্রামবাসীকে জানাইতে লাগিল যে, সুরেন রায় আর একটা নূতন কীর্ত্তি করিয়াছে, তখন মাধবী সন্তোষের হাত ধরিয়া দাসীকে অগ্রবর্ত্তিনী করিয়া নৌকায় উঠিয়া বসিল।

 বাটীর অদূরেই নদী; মাঝিকে কহিয়া দিল, ‘সোমরাপুরে যাইতে হইবে।’ একবার প্রমীলাকে দেখিয়া যাইতে হইবে!

 গোলাগাঁ হইতে পনর ক্রোশ দূরে সোমরাপুরে প্রমীলার বিবাহ হইয়াছিল। আজি এক বৎসর হইতে সে শ্বশুর-ঘর করিতেছে। সে হয় ত আবার কলিকাতায় যাইবে,– কিন্তু মাধবী তখন কোথায় থাকিবে? তাই একবার দেখা করা!

 সকাল-বেলা সূর্য্যোদয়ের সঙ্গে মাঝিরা নৌকা খুলিয়া দিল। স্রোতের মুখে নৌকা ভাসিয়া চলিল; বাতাস অনুকূল ছিল না, তাই ধীর-মন্থর-গমনে ক্ষুদ্র নৌকা বাঁশঝাড়ের ভিতর দিয়া, শিয়াকুল ও বেতঝোপের কাঁটা বাঁচাইয়া, শরঝাড় ঠেলিয়া ধীরে ধীরে চলিল। সন্তোষকুমারের আনন্দ ধরে না! সে ছইয়ের ভিতর হইতে হাত বাড়াইয়া গাছের পাতা ও ডগা ছিঁড়িবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিল। মাঝিরা কহিল, “বাতাস না থামিলে, কা’ল দুপুর পর্য্যন্ত নৌকা সোমরাপুরে লাগিবে না।”

 আজ মাধবীর একাদশী, কিন্তু সন্তোষকুমারের জন্য কোথাও পান্সি বাঁধিয়া, পাক করিয়া তাহাকে খাওয়াইতে হইবে। মাঝি