জন ও চন্দ্রাপীড়ের সঙ্গিগণ সকলে, বিস্ময়াপন্ন হইয়া তাপসকুমারের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া রহিল। তিনি প্রতিবচন প্রদান করিতে আরম্ভ করিয়া কহিলেন, গন্ধর্ব্বরাজপুত্ত্রি! অবহিত হইয়া শ্রবণ কর। তুমি সেইরূপ বিলাপ ও পরিতাপ করিতেছিলে, তোমাকে একাকিনী রাখিয়া, “রে দুরাত্মন্! বন্ধুকে লইয়া কোথায় যাইতেছিস্” এই কথা বলিতে বলিতে অপহরণকারী সেই পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে চলিলাম। তিনি আমার কথায় কিছুই উত্তর না দিয়া স্বর্গমার্গে উপস্থিত হইলেন। বৈমানিকেরা বিস্ময়োৎফুল্ল নয়নে দেখিতে লাগিল। দিব্যাঙ্গনারা ভয়ে পথ ছাড়িয়া দিল। আমি ক্রমাগত পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলাম। তিনি চন্দ্রলোকে উপস্থিত হইলেন। তথায় মহোদয়নাম্নী সভার মধ্যে চন্দ্রকান্তমণিনির্ম্মিত পর্য্যঙ্কে প্রিয় সখার শরীর সংস্থাপিত করিয়া কহিলেন, কপিঞ্জল! আমি চন্দ্রমা, জগতের হিতের নিমিত্ত গগনমণ্ডলে উদিত হইয়া স্বকার্য্য সম্পাদন করিতেছিলাম। তোমার এই প্রিয় বয়স্য বিরহবেদনায় প্রাণত্যাগ করিবার সময় বিনাপরাধে আমাকে এই বলিয়া শাপ দিলেন, “রে দুরাত্মন্! যেহেতু তুই কর দ্বারা সন্তাপিত করিয়া বল্লভার প্রতি সাতিশয় অনুরক্ত এই ব্যক্তির প্রাণ বিনাশ করিলি, এই অপরাধে তোকে ভূতলে বারংবার জন্ম গ্রহণ করিতে হইবেক এবং আমার ন্যায় অনুরাগপরবশ হইয়া প্রিয়বিয়োগে দুঃসহ যন্ত্রণা অনুভব করিতে হইবেক।” বিনাপরাধে শাপ দেওয়াতে আমি ক্রোধান্ধ হইলাম, এবং বৈরনির্য্যাতনের নিমিত্ত এই বলিয়া প্রতিশাপ প্রদান করিলাম, “রে মূঢ়! তুই এবার যেরূপ যাতনা ভোগ করিলি, বারংবার তোকে এইরূপ যাতনা ভোগ করিতে হইবেক।” ক্রোধ শান্তি হইলে ধ্যান করিয়া দেখিলাম, আমার কিরণ হইতে অপ্সরাদিগের যে কুল উৎপন্ন হয়, সেই কুলে গৌরীনাম্নী গন্ধর্ব্বকুমারী জন্ম গ্রহণ করেন; তাঁহার দুহিতা মহাশ্বেতা এই মুনিকুমারকে পতি রূপে বরণ করিয়াছে। তখন সাতিশয় অনুতাপ হইল। কিন্তু শাপ দিয়াছি
পাতা:কাদম্বরী.djvu/১২৪
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২০
কাদম্বরী।