পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রণাম মন্ত্র-- আয়ুপ্রদ মহাভাগ সোমবংশসমুদ্ভব।

 প্রভাসে আগত পার্থ কুন্তীর কুমার।
 দ্বারকায় গোবিন্দ শুনিল সমাচার।।
 অতি শীগ্র করিলেন তথায় গমন।
 প্রভাসে অর্জ্জুন সহ হইল মিলন।।
 আলিঙ্গন করিয়া উভয়ে পরস্পর।
 উভয়ের হইল উত্তর প্রত্যুত্তর।।
 অর্জ্জুনে লইয়া পরে দৈবকী নন্দন।
 রৈবতক নামে গিরি করেন গমন।।
 গোবিন্দের আজ্ঞায় তথায় যদুগণ।
 রৈবত পর্ব্বতে পূর্ব্বে করেছে গমন।।
 কৃষ্ণ ধনঞ্জয় আরোহণ করে রথে।
 দোঁহে একমূর্ত্তি কেহ না পারে চিনিতে।।
 দোঁহে নীল ঘনশ্যাম অরুণ অধর।
 কিরীট কুণ্ডল হার শোভে পীতাম্বর।।
 কেহ বলে কৃষ্ণে পার্থ, পার্থে বলে হরি।
 দোঁহামূর্ত্তি দেখিয়া বিস্মিত নর-নারী।।
 তবে ধনঞ্জয় বীর রথ হৈতে উলি।
 লইলেন শ্রীবসুদেবের পদধূলি।।
 আলিঙ্গন শিরে চুম্ব বসুদেব দিয়া।
 যতেক বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসিলেন বসিয়া।।
 কহিলেন অর্জ্জুন আপন বিবরণ।
 নারদ নিয়ম হেতু ভ্রমি তীর্থগণ।।
 বসুদেব বলেন থাকহ এ আলয়।
 দ্বাদশ বৎসর যতদিনে পূর্ণ হয়।।
 উগ্রসেন বলভদ্র সাত্যক সাত্যকি।
 একে একে সম্ভাষেন পরম কৌতুকী।।
 লইয়া চলিল সবে রৈবতক গিরি।
 সম্ভাষিতে আইল যতেক যদুনারী।।
 মাতুলানীগণে পার্থ প্রণাম করিয়া।
 যথাযোগ্য সম্ভাষ করেন নম্র হৈয়া।।
 হেনকালে সুভদ্রা যে বসুদেবসুতা।
 প্রথম যুবতী সর্ব্বরূপগুণযুতা।।
 বিচিত্র করবীভার সুচাঁচর চুল।
 মেঘের সঞ্চারে যেন কুরুবক ফুল।।
 তার গন্ধে মকরন্দ ত্যাজি অলিকুলে।
 চতুর্দ্দিকে ঝঙ্কারিয়া অনুক্ষণ বুলে।।
 দুই গণ্ড মণ্ডিত কুণ্ডল শ্রুতিমূলে।
 চন্দ্রজ্যোতি গজমতি শোভে নাসাহুলে।।
 বদন নিন্দিত চাঁদ নাসা তিলফুলে।
 কটাক্ষ চাহনিতে মুনির মন ভুলে।।
 কুচযুগ সম পূগ ঢাকিয়া দুকূল।
 মধ্যদেশ মৃগঈশ নহে সমতুল।।
 জঘন সরস ঘন নর্ত্তন অতুলে।
 হেরি মুগ্ধ হয় কাম চরণ-অঙ্গুলে।।
 নিতম্ব কুঞ্জর-কুম্ভ জিনিয়া বিপুল।
 জাতি যুথি হার পরে মালতী বকুল।।
 দেখি তবে পার্থ জিজ্ঞাসেন গোবিন্দেরে।
 কেবা এ সুন্দরী হয় সবাকার পরে।।
 এ কন্যা অবিবাহিতা অনুমান করি।
 শুনিয়া পার্থের বাক্য কহেন শ্রীহরি।।
 বসুদেবসুতা হয় আমার ভগিনী।
 সারণের সহোদরা সুভভ্রা নামিনী।।
 বিবাহ না হয়, নাহি মিলে যোগ্যবর।
 শুনিয়া লজ্জিত অতি পার্থ ধনুর্দ্ধর।।
 অর্জ্জুনের মুখ দেখি সুভদ্রা মূর্চ্ছিত।
 অজ্ঞান হইয়া ভূমে পড়ে আচম্বিত।।
 সত্যভামা বলে না আইসে ভদ্রা কেনে।
 সবে বলে একক বসিয়া কি কারণে।।
 সুভদ্রা বলিল সখি ধরি মোরে লহ।
 কণ্টক ফুটিল পায় বাহির করহ।।
 শুনি সত্যভামা ধরি তুলিলেক হাতে।
 নাহিক কণ্টকাঘাত দেখেন পদেতে।।
 সত্যভামা বলেন কি হেতু ভাঁড়াইলা।
 নাহিক কণ্টকাঘাত কেন বা পড়িলা।।
 নিভৃতে সুভদ্রা কহে কি কহিব সখি।
 যে কণ্টক ফুটিল কোথায় পাবে দেখি।।
 অর্জ্জুনের নয়ন চাহনি তীক্ষ্ণশর।
 আজি অঙ্গ আমার করিল জ্বর জ্বর।।
 দেখ মম অঙ্গতাপ ঘন কম্পমান।
 ছটফট করে তনু বাহিরায় প্রাণ।।
 ছাড় সত্যভামা আমি না পারি যাইতে।
 এত বলি অর্জ্জুনের লাগিল দেখিতে।।