পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাতপা মুনিশ্রেষ্ঠ মার্কণ্ডেয় নমোহস্তুতে।।

 সত্যভামা বলে ভদ্রা খাইলি কি লাজ।
 করিলি কলঙ্ক নিষ্কলঙ্ক কুলমাঝ।।
 পিতা বসুদেব, ভাই রাম নারায়ণ।
 তিনলোক মধ্যে যাঁরে পূজে সর্ব্বজন।।
 ইঁহা সবাকার লজ্জা করিতে চাহিস্।
 দেখিয়া পুরুষে প্রাণ ধরিতে নারিস্।।
 ভারতীর এতেক নিষ্ঠুর বাণী শুনি।
 সকরুণ চাহে ভদ্রা চক্ষে বহে পানী।।
 ধিক্ ধিক্ ব্যর্থ জন্ম নারীর ভূতলে।
 পরবশ দহে তনু বিরহ-অনলে।।
 সত্যভামা বলে কি নিন্দিস্ কামিনী।
 নারীরূপা দেখি ক্ষিতি সংসারধারিণী।।
 স্ত্রী হৈতে হইল পূর্ব্বে জীবের সৃজন।
 শক্তিরূপে রক্ষা করে সবার জীবন।।
 স্ত্রীর নাম প্রথমেতে মঙ্গলকারণ।
 লক্ষী অগ্রে বলয়ে পশ্চাতে নারায়ণ।।
 শঙ্কর ছাড়িয়া অগ্রে ভবানীর নাম।
 রামসীতা নাহি বলে বলে সীতারাম।।
 গৃহিনী থাকিলে লোকে বলে তারে গৃহী।
 সংসারে দেখহ নারী বিনা কেহ নাহি।।
 স্ত্রী হইতে হয় ভদ্রা সবার উৎপত্তি।
 স্ত্রী বিনা করিতে বংশ কাহার শকতি।।
 ভদ্রা কহে যত কহ নাহি করি জ্ঞান।
 এখনি ত্যাজিব প্রাণ তোমা বিদ্যমান।।
 কৌরববংশীয় যে পাণ্ডব বলবান্।
 বিনা ধনঞ্জয় আমি নাহি দেখি আন।।
 আজি যদি ধনঞ্জয় আমারে না দিবে।
 নিশ্চয় আমার বধ তোমারে লাগিবে।।
       ------
 অর্জ্জুনের সহিত সুভদ্রার বিবাহ কারণ
     সত্যভামার সহিত অর্জ্জুনের কথা।
   তবে নিশাকালে সত্রাজিতের নন্দিনী।
 একান্তে কহেন কান্তে ভদ্রার কাহিনী।।
 গোবিন্দ বলেন আমি ভাবিতেছি মনে।
 আসিয়াছে অর্জ্জুন এখানে বহুদিনে।।
 করাইব বিবাহ দোঁহার যে প্রকারে।
 আজি নিশা তুমি বোধ করাহ ভদ্রারে।।
 সত্যভামা বলে নহে বিলম্বের কথা।
 আজি নিশা পার্থ বিনা মরিবে সর্ব্বথা।।
 গোবিন্দ বলেন যে আমার সাধ্য নয়।
 কর গিয়া যেমত সঙ্কট নাহি হয়।।
 কৃষ্ণের আদেশে চলিল সত্যভামা।
 সুভদ্রা লইয়া যথা পার্থ মহাধামা।।
 দুয়ার করিয়া বন্ধ কনক কপাটে।
 শুইয়া আছেন পার্থ রত্নময় খাটে।।
 অর্জ্জুন অর্জ্জুন বলি ডাকেন শ্রীমতি।
 কে তুমি বলিয়া জিজ্ঞাসেন মহামতি।।
 সত্যভামা বলিলেন সত্রাজিত-সুতা।
 ঘুচাও কপাট কিছু আছে গুপ্তকথা।।
 অর্জ্জুন বলেন হৈল অর্দ্ধেক রজনী।
 এত রাত্রে আইলেন কি হেতু আপনি।।
 যদি কার্য্য ছিল পাঠাইতে দূতগণ।
 আজ্ঞামাত্রে করিতাম তথায় গমন।।
 ইহা না করিয়া তুমি আইলা আপনি।
 যে আজ্ঞা করিবা কালি করিব তখনি।।
 সত্যভামা বলেন যে দূতকর্ম্ম নয়।
 সে কারণে আইলাম তোমার আলয়।।
 তোমার কষ্টের কথা শুনিয়া শ্রবণে।
 না হইল নিদ্রা মম  মহাতাপ মনে।।
 এক ভার্য্যা পঞ্চভাই কি সুখে নিবাস।
 সেই হেতু দ্বাদশ বৎসর বনবাস।।
 সেই হেতু আইলাম হৃদয়ে বিচারি।
 আমি দিব আর এক পরমা সুন্দরী।।
 অর্জ্জুন বলেন এত স্নেহ কর মোরে।
 পালিব সকল আজ্ঞা গোবিন্দ গোচরে।।
 সত্যভামা বলিলেন বিলম্বে কি কাজ।
 গান্ধর্ব্ব-বিবাহ কর রজনীর মাঝ।।
 পার্থ বলিলেন কহ এ অদ্ভুত কথা।
 কেবা এ সুন্দরী হয় কাহার দুহিতা।।
 না জানিয়া না শুনিয়া তদন্ত তাহার।
 করিতে বিবাহ বল কি মত বিচার।।