পাতা:কাশীদাসী মহাভারত.djvu/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রণাম মন্ত্র--বাণেশ্বরায় নরকার্ণব-তারণায়।

  শ্রীকৃষ্ণকে দান পাইয়া নারদের গমন।
   ঊর্দ্ধবাহু নারদ নাচেন হৃষ্টমনে।
 দক্ষিণার ধন দেন দরিদ্র ব্রাহ্মণে।।
 নারদ দ্বারকানাথে লৈয়া যান ধরি।
 শুনিয় দ্বারকা শুদ্ধ ধায় নরনারী।।
 পারিজাত বৃক্ষ হৈতে খসান বন্ধন।
 গোবিন্দে বলেন সব ফেল আভরণ।।
 এক্ষণে গোপাল আর এ বেশে কি কাজ।
 তপস্বী হইয়া ধর তপস্বীর সাজ।।
 কিরীট ফেলিয়া শিরে ধর পিঙ্গজটা।
 কনক পইতা ফেলি লহ যোগপাটা।।
 কনক মুকুতা হার ফেল বনমালা।
 পীতাম্বর ফেলিয়া পরহ বাঘছালা।।
 মুনির বচনে হরি ত্যাজে সেইক্ষণ।
 হৈলেন তপস্বীবেশ দৈবকী-নন্দন।।
 হাতেতে করিয়া বীণা কাঁধে মৃগছালা।
 পাছে পাছে যান যেন সন্ন্যাসীর চেলা।।
 রুক্মিনী প্রভৃতি ষোল সহস্র রমণী।
 পাছে পাছে চলি যায় যতেক কামিনী।।
 নারদ বলেন কে তোমরা যাহ কোথা।
 রুক্মিনী বলেন তুমি লৈয়া যাবে যথা।।
 নারদ বলেন কি তোমার প্রয়োজন।
 নানা স্থানে ভ্রমি আমি তপস্বী ব্রাহ্মণ।।
 রুক্মিণী বলেন কৃষ্ণ দান পেলে মুনি।
 যৌতুক পাইলা ষোল সহস্র রমণী।।
 মুনি বলে রুক্মিনী যে মিছা কর দ্বন্দ্ব।
 পাছে ক্রোধ না করিও বলি ভাল মন্দ।।
 যখন করিল দান সত্রাজিত সুতা।
 তখনি ত কেহ না কহিলা কোন কথা।।
 তার অগ্রে কহিবারে নাহিলে ভাজন।
 আমার সহিত তব কোন প্রয়োজন।।
 রুক্মিনী বলেন পুনঃ শুন মুনিরায়।
 সত্যভামা দিল দান আমার কি দায়।।
 প্রাণনাথ লৈয়া যাহ আমা সবাকারে।
 কহ মুনি আমরা রহিব কোথাকারে।।
       ------
  নারদকে শ্রীকৃষ্ণ পরিমাণে ধনদান।
   গোবিন্দেরে লইয়া নারদ মুনি যান।
 বিষণ্ণবদন হৈয়া সত্যভামা চান।।
 ঘন পড়ি উঠি ধায় বাতুল সমান।
 দুই হাতে আগুলিয়া মুনিরে রহেন।।
 বুঝিনু নারদ মুনি চতুরালি তোর।
 ভাঁড়িয়া লইয়া যাও প্রাণপতি মোর।।
 বালকে ভাণ্ডায় যেন হাতে দিয়া কলা।
 কাচ দিয়া লৈয়া যাও কাঞ্চনের মালা।।
 শিলা দিয়া লৈয়া যাও পরশ রতন।
 শুধু কায়া দিয়া যাও লইয়া জীবন।।
 না হইত ব্রত না হইত কার্য্য তার।
 বাহুড়িয়া দেহ প্রাণপতি যে আমার।।
 মুনি বলে সত্যভামা সত্যভ্রষ্ট হৈলা।
 সবাকার সাক্ষাতে গোবিন্দে দান দিলা।।
 এক্ষণে কহিছ ব্রত নাহি প্রয়োজন।
 দান লইয়াছি আমি দিব কি কারণ।।
 একক দেখিয়া চাহ বল করিবারে।
 মম ঠাঁই লইতে কাহার শক্তি পারে।।
 এত বলি নারদ ঘুরান দুই আঁখি।
 শরীর কম্পিত দেবী, মুনিমুখ দেখি।।
 সত্যভামা বলেন না তব ক্রোধে ডরি।
 বড় ক্রোধ হইলে ফেলাবে ভস্ম করি।।
 গোবিন্দ বিচ্ছেদে মরি সেই মম সুখ।
 না দেখিব কৃষ্ণ আর এই বড় দুঃখ।।
 এক কথা কহি অবধান কর মুনি।
 পূর্ব্বে যে বলিলা ব্রত করিল ইন্দ্রানী।।
 পার্ব্বতী করিল আর স্বাহা অগ্নিপ্রিয়া।
 তারা সব স্বামী পাইল কেমন করিয়া।।
 নারদ বলেন সর্ব্ব ভক্ষ্য হুতাশন।
 চারি মুখে ধরে তার প্রচণ্ড কিরণ।।
 তাহারে লইয়া সতী কি করিব আমি।
 সে কারণে তাহারে ফিরাইয়া দিনু স্বামী।।
 পার্ব্বতীর পতি রুদ্র বলদ বাহন।
 হাড়মালা ভস্ম মাখে অঙ্গে ফণিগণ।।