পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -প্রথম খণ্ড.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՎց বাংলায় ভ্রমণ নৈহাটির উত্তরে অবস্থিত গৌরিফা গ্রাম প্রসিদ্ধ সমাজসংস্কারক, বাগ্মী, ভগবৎপ্রেমিক ও সাহিতাসেবী স্বগীয় কেশবচন্দ্র সেনের জন্মস্থান । কেশবচন্দ্র একজন অসাধারণ মনীষা সম্পন্ন মহাপুরুষ ছিলেন। তিনি ব্রাহ্ম সমাজে “নব বিধান" মতের প্ৰবৰ্ত্তক। বাংলার নব জাগরণের অন্যতম অগ্রদূত হিসাবে তাহার নাম চিরদিনই স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকিবে । ,

নৈহাটি একটি জংশন সটেশন। ব্যাণ্ডেল জংশন হইতে পূৰ্ব্বভাবত রেলপথের একটি ছোট শাখা হুগলীর নিকট “জুবিলী ব্রিজ" নামক ঝুলানো সেতুর উপর দিয়! গঙ্গা পার হইয়া এই স্থানে আসিয়া মিলিত হইয়াছে । হালিশহর --কলিকাতা হইতে ২৬ মাইল দূর । মুকুন্দরাম চক্রবর্তী কবিকঙ্কণ প্রণীত চণ্ডীকাব্যে হালিশহরের নামোল্লেখ আছে। এই স্থান কমারহট্ট পরগণার অন্তর্গত এবং প্রাচীন কালে ইহা কুমারহট্ট নামে পরিচিত ছিল। শ্রীচৈতন্যদেবের দীক্ষাগুরু ঈশ্বরপুরী হালিশহর বা কুমারহট্টের অধিবাসী ছিলেন । যে স্থানে তাহার বাসভবন ছিল, বর্তমানে উহা “চৈতন্য ডোবা” নামে পরিচিত, এখানে একটি অতি পুরাতন পুষ্করিণী ও তাহার চতুদকে গৃহাদির ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। সম্প্রতি ঈশ্বরপুরীর জন্মভিটায় ব্রোঞ্জ নিৰ্ম্মিত গোর নিতাই মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করা হইয়াছে এবং একটি মঠের নিৰ্ম্মাণ কার্য আরম্ভ হইয়া সম্ভবতঃ অর্থাভাবে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়িয়া আছে। শ্রীচৈতন্যদেব গুরুর জন্মভিট দর্শন করিবার জন্য কুমারহট্টে আগমন করিয়াছিলেন এবং গুরুর প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ এই স্থানের ধুলিমুষ্টি উত্তরায়ের অঞ্চলে বাধিয়া লইয়াছিলেন। ঈশ্বর পুরীর অপূৰ্ব্ব পাণ্ডিতা ও ভগবস্তুক্তি অতি উজ্জল অক্ষরে বৈষ্ণব সাহিতো লিপিবদ্ধ হইয়াছে। শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম অন্তরঙ্গ ভক্ত শ্ৰীবাস পণ্ডিত কুমারহট্টে একটি বাটী নিৰ্ম্মাণ করিয়া মধ্যে মধ্যে তথায় বাস করিতেন। নবদ্বীপে ইহারই বাটতে শ্রীচৈতন্যদেবের কীৰ্ত্তন মহোৎসব হইত। কুমারহট্টের বাসুদেব ঘোষ চৈতন্যদেব বিষয়ক পদাবলী রচনা করিয়া প্রসিদ্ধি লাভ করেন। ইনি এবং ইহার তুষ্ট ভ্রাতা মাধব ও গোবিন্দানন্দ চৈতন্যদেবের ভক্ত অনুচর এবং বিখ্যাত কীৰ্ত্তনিয়া ছিলেন । শেষ বয়সে ইহারা নবদ্বীপবাসী হন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে হালিশহরে বিখ্যাত সঙ্গীত রচয়িত শাক্ত সাধক রামপ্রসাদ সেন জন্ম গ্রহণ করেন। জীবিকা নিৰ্ব্বাহের জন্য রামপ্রসাদ কলিকাতার জনৈক ধনী ব্যক্তির সেরেস্তায় মুহুরির কার্য গ্রহণ করেন। কিন্তু তাহার মন সৰ্ব্বদাই কালী বিষয়ক চিন্তায় এতদূর মগ্ন থাকিত যে অনেক সময়ে অন্যমনস্ক হইয়া তিনি হিসাবের খাতার উপর স্বরচিত শ্যামা বিষয়ক সঙ্গীত লিখিয়া ফেলিতেন । এইরূপ একটি সঙ্গীতের কয়েকটি কলি একদিন তাহার মনিবের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তিনি বুঝিতে পারিলেন যে রামপ্রসাদ অতি উচ্চ স্তরের ভাবুক ও স্বভাব-কবি । গুণগ্রাহী মনিব রামপ্রসাদকে মুহুরির কার্য্য হইতে অব্যাহতি দিয়া তাহার মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। অর্থ চিন্তা হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া রামপ্রসাদ শ্যামা সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন এবং কথিত আছে যে তিনি