পাতা:গৌড়রাজমালা.djvu/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোবিন্দপাল।

কাল নিরূপণ করা যায়। এই শিলালিপির সম্পাদন-কাল সম্বন্ধে উল্লিখিত হইয়াছ—“সম্বৎ ১২৩২ বিকারি-সম্বৎসরে শ্রীগোবিন্দপালদেব-গতরাজ্যে চতুর্দ্দশ-সম্বৎসরে গয়ায়াং॥”[১] ১২৩২ বিক্রম-সম্বৎ বা ১১৭৫ খৃষ্টাব্দের চতুর্দ্দশ বৎসর পূর্ব্বে, অর্থাৎ ১১৬১ খৃষ্টাব্দে, গোবিন্দপালের রাজত্বের অবসান হইয়াছিল। গোবিন্দপাল বা তাঁহার পূর্ববর্ত্তী নৃপতি হয়ত বিজয়সেন কর্ত্তৃক বরেন্দ্র হইতে তাড়িত হইয়া, মগধে আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। ১২০২ বিক্রম-সম্বতে [১১৪৬ খৃষ্টাব্দে] কান্যকুব্জেশ্বর গোবিন্দচন্দ্র মগধ আক্রমণ করিয়াছিলেন। কারণ, গোবিন্দচন্দ্রের এই সালের একখানি তাম্রশাসনে[২] উল্লিখিত হইয়াছে, উহা মুদ্‌গগিরি বা মুঙ্গেরে সম্পাদিত হইয়াছিল। নেপাল হইতে সংগৃহীত এবং কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুস্তকালয়ে রক্ষিত একখানি হস্ত-লিখিত পুস্তকের উপসংহারে লিখিত আছে,[৩]—“পরমেশ্বরেত্যাদি রাজাবলী পূর্ব্ববৎ শ্রীমদ্গোবিন্দপাল-দেবানাং বিনষ্টরাজ্যে অষ্টত্রিংশৎ সম্বৎসরেভিলিখ্যমানো।” এ স্থলে বিনষ্ট-রাজ্যের উল্লেখ দেখিয়া অনুমান হয়, কোনও শত্রুকর্ত্তৃক গোবিন্দপাল রাজ্যচ্যুত হইয়াছিলেন। গোবিন্দপালের রাজ্যনষ্টকারী সম্ভবত বিজয়সেনের পুত্র বল্লালসেন। গোবিন্দপালের রাজ্যনাশের ১৪ এবং ৩৮ বৎসর পরেও, তাঁহার বিনষ্ট বা গতরাজ্যের হিসাবে, সাল-গণনার প্রচলন দেখিয়া মনে হয়, যিনি গোবিন্দপালের রাজ্য নষ্ট করিয়াছিলেন, তিনি সেই স্থলে স্বীয় আধিপত্য সুদৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠিত করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন না। তিনি ভাঙ্গিতে পারিয়াছিলেন বটে, কিন্তু নূতন করিয়া গড়িবার অবসর পাইয়াছিলেন না। এই জন্যই বিজেতার বিজয়-রাজ্যের সম্বৎসর প্রচলিত হইয়াছিল না; বিজিত গোবিন্দপালের বিনষ্ট রাজ্যের সম্বৎসরই প্রচলিত ছিল।

 যে দুইটি স্বতন্ত্র রাজবংশ অভ্যুদিত হইয়া, পাল-রাজবংশ উন্মূলিত করিয়াছিল, তন্মধ্যে বঙ্গের বর্ম্মা-বংশ পূর্ব্বতন এবং প্রথম উল্লেখযোগ্য। বর্ম্মা-বশের ইতিবৃত্ত-সঙ্কলনকারীর প্রধান অবলম্বন হরিবর্ম্মার তাম্রশাসন, এবং হরিবর্ম্মার ও তাঁহার পুত্রের মন্ত্রী ভট্ট-ভবদেব-বালবলভীভুজঙ্গের ভুবনেশ্বরের প্রশস্তি। হরিবর্ম্মার তাম্রশাসনের পশ্চাদ্ভাগের অস্পষ্ট প্রতিকৃতি এবং তাহার একটি আনুমানিক পাঠ মাত্রই প্রকাশিত হইয়াছে।[৪] এই অংশ হইতে জানিতে পারা যায়—“বিক্রমপুর-

  1. Cunningham’s Archæological Survey Report, Vol. III, p. 125. বন্ধুবর শ্রীযুক্ত রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এই শিলালিপির একটি ছাপ তুলিয়া অনুসন্ধান-সমিতিকে প্রদান করিয়াছেন।
  2. Epigraphia Indica, Vol VII, p. 99.
  3. Bendall’s Catalogue of Buddhist Sanskrit Mss. Cambridge, p iii.
  4. শ্রীনগেন্দ্রনাথ বসু প্রণীত “বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস”, দ্বিতীয় ভাগ, ২১৫ পৃষ্ঠা ও চিত্র দ্রষ্টব্য। বসু মহাশয় বলেন,—সুলতান মামুদ কর্ত্তৃক কান্যকুব্জ আক্রমণ সময়ে (১০১৮ খৃষ্টাব্দে) যিনি কান্যকুব্জের রাজা ছিলেন, তাঁহার নাম জয়পাল (কুল-গ্রন্থোক্ত জয়চন্দ্র)। “অধিক সম্ভব, পরম ধার্ম্মিক মহারাজ হরিবর্ম্মদেব কনোজপতি জয়পাল বা জয়চন্দ্রের কন্যার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন।” আবার “প্রায় আড়াই শত বর্ষ পূর্ব্বে” আবির্ভূত রাঘবেন্দ্র কবিশেখর “প্রাচীন লোকদিগের মুখে শুনিয়া এবং প্রাচীন কুলগ্রন্থ সকল দেখিয়া” যাহা লিখিয়া গিয়াছেন, তাহা হইতে জানা যায়, হরিবর্ম্মদেব যখন “গৌড়োড্রবঙ্গাধিপ”, তখন কান্যকুব্জে “যবনাগমন” ও “রাজ্যনাশ” দেখিয়া, গঙ্গাগতি প্রভৃতি বহু ব্রাহ্মণ বঙ্গে আসিয়াছিলেন। অতএব হরিবর্ম্মা সুলতান মামুদ ও জয়চন্দ্রের বা জয়পালের

৫৫