হতাশভাবে একটা নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল,—“এর কি প্রতীকারের কোন উপায় নেই জ্যাঠাইমা?” বিশ্বেশ্বরী বলিলেন,—“আছে বই কি বাবা। প্রতীকার আছে শুধু জ্ঞানে। যে পথে তুই পা দিয়েছিস, শুধু সেই পথে। তাই ত তোকে কেবলি বলি তুই তোর এই জন্মভূমিকে কিছুতে ছেড়ে যাসনে।” প্রত্যুত্তরে রমেশ কি একটা বলিতে যাইতেছিল, বিশ্বেশ্বরী বাধা দিয়া বলিলেন,—“তুই বলবি, মুসলমানদের মধ্যেও ও অজ্ঞান অত্যন্ত বেশি। কিন্তু, তাদের সজীব ধর্ম্মই তাদের সব দিকে শুধ্রে রেছেচে। একটা কথা বলি রমেশ, পীরগাঁয়ে খবর নিলে শুন্তে পাবি, জাফর ব’লে একটা বড়লোককে তারা সবাই ‘একঘরে’ ক’রে রেখেছে, সে, তাঁর বিধবা সৎমাকে খেতে দেয় না ব’লে। কিন্তু, আমাদের এই গোবিন্দ গাঙুলী সে দিন তাঁর বিধবা বড়ভাজকে নিজের হাতে মেরে আধমরা ক’রে দিলে, কিন্তু, সমাজ থেকে তাঁর শাস্তি হওয়া চুলোয় যাক্, সে নিজেই একটা সমাজের মাথা হ’য়ে ব’সে আছে। এ সব অপরাধ আমাদের মধ্যে শুধু ব্যক্তিগত পাপপুণ্য; এর সাজা ভগবান্ ইচ্ছা হয় দেবেন, না হয় না দেবেন, কিন্তু, পল্লী-সমাজ তাতে ভ্রূক্ষেপ করে না।”
এই নূতন তথ্য শুনিয়া একদিকে রমেশ যেমন অবাক্ হইয়া গেল, অন্যদিকে তাঁহার মন ইহাকেই স্থির-সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে দ্বিধা করিতে লাগিল। বিশ্বেশ্বরী তাহা যেন বুঝিয়াই বলিলেন,—“ফলটাকেই উপায় ব’লে ভুল করিস্নে