পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিজয়া

 ইচ্ছামতীর তীরে একটী ক্ষুদ্র কুটিরে জয়চাঁদ বাদ করিত। আম ও কাঁঠাল গাছের ছায়ায় তাহার ঠাকুরদাদা এই ঘরখানি বাঁধিয়াছিল। নদীতীরে বাস করিলে সময় বুধিয়া জাল বাহিতে বাহির হওয়া যায়, নৌকাখনির উপরে সর্ব্বদা দৃষ্টি থাকে—এইরূপ নানা রকম সুবিধা বুঝিয়া জয়টাদের পূর্ব্বপুরুষ গ্রাম হইতে দূরে ঘর বাধিয়াছিল। দ্বিপ্রহরে আম ও কাঁঠাল গাছের উপরে বৃহৎ জাল শুকাইতে দেখিয়া সকলেই বুঝিতে পারিত যে ইহা মৎস্যজীবীর গৃহ। এই গৃহে বিধবা কন্যাকে লইয়া জয়চাঁদ একা বাস করিত।

 সে তখন বৃদ্ধ হইয়াছে,কিন্তু ষাট বৎসর বয়সে তাহার মুদীর্ঘ সবল দেহ দেখিলে সকলেই বিস্মিত হইয়া যাইত। যৌবনে সে নৌকা লইয়া দেশে বিদেশে যাইত, রেলপথে দেশ ছাইয়া যাইবার পূর্ব্বে সে কতবার যাত্রী লইয়া গঙ্গা-সাগরে গিয়াছে, দুস্তর ঢোল-সমুদ্র পার হইয়া সাগর-সঙ্গমে উপস্থিত হইয়াছে। দশ বৎসর পূর্ব্বে মহামারিতে স্ত্রী-পুত্র হারাইয়া জয়চাঁদের স্বভাব পরিবর্ত্তিত হইয়া গিয়াছিল, তাহার পর সে প্রায়ই বিদেশে যাইত ন-বৎসরে দুই একবার মাত্র গ্রামে প্রবেশ করিত। সে সমস্ত রাত্রি জাগিয়া মাছ ধরিত, প্রভাতে তাহার কন্যা গ্রামে গিয়া তাহা বিক্রয় করিয়া আসিত। বৃদ্ধ জাল বুনিয়া এবং ঘুমাইয়া সমস্ত দিন

৯৭