পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ২২ ]

অষ্টম পরিচ্ছেদ।

 ব্রহ্মচারীর আজ্ঞা পাইয়া ভবানন্দ মৃদু মৃদু হরিনাম করিতে করিতে, যে চটীতে মহেন্দ্র বসিয়াছিল, সেই চটীর দিকে চলিলেন। সেইখানেই মহেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া সম্ভব বিবেচনা করিলেন।

 পাঠক এইস্থানে দিঙ্নিরূপণ করুন। সে সময়ে ইংরেজের কৃত আধুনিক রাস্তাসকল ছিল না। রাজনগর হইতে কলিকাতায় আসিতে হইলে, মুসলমান সম্রাটনির্ম্মিত অপূর্ব্ব বর্ত্ম দিয়া আসিতে হইত। মহেন্দ্রও পদচিহ্ণ হইতে রাজনগর যাইতে দক্ষিণ হইতে উত্তর দিকে যাইতেছিলেন। এইজন্য পথে সিপাহীদিগের সঙ্গে তাঁহার সাক্ষাৎ হইয়াছিল। ভবানন্দ তালপাহাড় হইতে যে চটীর দিকে চলিলেন, সেও দক্ষিণ হইতে উত্তর। যাইতে যাইতে কাজে কাজেই অচিরাৎ ধনরক্ষাকারী সিপাহীদিগের সহিত সাক্ষাৎ হইল। তিনিও মহেন্দ্রের ন্যায় সিপাহীদিগকে পাশ দিলেন। একে সিপাহীদিগের সহজেই বিশ্বাস ছিল যে, এই চালান লুঠ করিবার জন্য ডাকাইতেরা অবশ্য চেষ্টা করিবে, তাতে আবার পথমধ্যে এক জন ডাকাইতকে গ্রেপ্তার করিয়াছে। কাজে কাজেই ভবানন্দকে আবার রাত্রিকালে পাশ দিতে দেখিয়াই তাহাদিগের বিশ্বাস হইল, যে এও আর এক জন ডাকাত। অতএব তৎক্ষণাৎ সিপাহীরা তাহাকেও ধৃত করিল।

 ভবানন্দ মৃদু হাসিয়া বলিলেন, “কেন বাপু।”

 সিপাহী বলিল, “তোম শালা ডাকু হো।”

 ভবা। দেখিতে পাইতেছ, গেরুয়াবসন পরা ব্রহ্মচারী আমি, ডাকাত কি এই রকম।

 সিপাহী। অনেক শালা ব্রহ্মচারী সন্ন্যাসী ডাকাতী করে।