পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।
৪৫

চাপড়াইল। তার পর দুই হাতে ধরিয়া টানাটানি করিল। সুতরাং কৌটাটি খুলিয়া গেল—বড়িটি পড়িয়া গেল।

 বাপের কাপড়ের উপর ছোট গুলিটি পড়িয়া গেল—সুকুমারী তাহা দেখিল। মনে করিল এও আর একটা খেলিবার জিনিস। কৌটা ফেলিয়া দিয়া থাবা মারিয়া বড়িটি তুলিয়া লইল।

 কৌটাটী সুকুমারী কেন গালে দেয় নাই বলিতে পারি না—কিন্তু বড়িটি সম্বন্ধে কালবিলম্ব হইল না। প্রাপ্ত মাত্রেণ ভোক্তব্যং—সুকুমারী বড়িটি মুখে পুরিল। সেই সময়ে তাহার উপর মার নজর পড়িল।

 “কি খাইল! কি খাইল! সর্বনাশ!” কল্যাণী ইহা বলিয়া, কন্যার মুখের ভিতর আঙ্গুল পুরিল। তখন উভয়েই দেখিলেন যে, বিষের কৌটা খালি পড়িয়া আছে। সুকুমারী তখন আর একটা খেলা পাইয়াছি মনে করিয়া দাঁত চাপিয়া—সবে গুটিকতক দাঁত উঠিয়াছে—মার মুখপানে চাহিয়া হাসিতে লাগিল। ইতিমধ্যে বোধ হয় বিষবড়ির স্বাদ মুখে কদর্য্য লাগিয়াছিল—কেন না কিছু পরে মেয়ে আপনি দাঁত ছাড়িয়া দিল, কল্যাণী বড়ি বাহির করিয়া ফেলিয়া দিলেন। মেয়ে কাঁদিতে লাগিল।

 বটিকা মাটীতে পড়িয়া রহিল। কল্যাণী নদী হইতে আঁচল ভিজাইয়া জল আনিয়া মেয়ের মুখে দিলেন। অতি সকাতরে মহেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “একটু কি পেটে গেছে?”

 মন্দটাই আগে বাপ মার মনে আসে—যেখানে অধিক ভালবাসা সেখানে ভয়ই অধিক প্রবল। মহেন্দ্র কখন দেখেন নাই যে বড়িটা আগে কত বড় ছিল। এখন বড়িটা হাতে লইয়া অনেক্ষণ ধরিয়া নিরীক্ষণ করিয়া বলিলেন, “বোধ হয় অনেকটা খাইয়াছে।”